ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: রাজধানীতে তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী      নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াতের নির্দেশে বেনাপোল বন্দর পরিদর্শনে তদন্ত কমিটি      সাভার মডেল থানায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধে আরো দুটি হত্যা মামলা      নেত্রকোনায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশত      




অস্থিরতা যেন কাটছেই না
ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প
এসএম শামসুজ্জোহা
Published : Wednesday, 18 September, 2024 at 12:16 PM
বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে দেশি ও বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে। তৈরি পোশাক খাতের অস্থিরতা কাটছেই না। বেতন বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। এর মধ্যে রাজনীতিও ঢুকে পড়েছে। এ সংকট দ্রুত শক্তভাবে প্রতিহত করতে না পারলে দেশের পুরো পোশাকশিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে কার্যত অচল হয়ে পড়ছে পোশাকশিল্প। বিরূপ পরিস্থিতির কারণে আশুলিয়া, সাভার ও টঙ্গীতে কার্যত অনেক কারখানা বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বিদেশি ক্রেতারা, দিচ্ছেন না নতুন অর্ডার। সামগ্রিকভাবে পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানান শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, ক্ষমতার পালা বদলের পর দেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করার পেছনে বকেয়া বেতনের সঙ্গে আরও দুটি বিষয় আলোচনায় আসছে। একটি হলো ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ; অন্যটি বিদেশি শক্তির ইন্ধন। এছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে কিছু কারখানা মালিকের অনুপস্থিতিও শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা মনে করছেন। পোশাক শিল্পের এ অস্থিরতায় ইতোমধ্যে ১০-১৫ শতাংশ সম্ভ্যাব্য ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম উপদেষ্টা। কয়েকটি দেশ এই সুযোগকে ব্যবহার করে ক্রেতাগোষ্ঠীকে টানার চেষ্টা করছে।
শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ নিচ্ছে; শ্রমিক সেজে হামলা করছে। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আ’লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠী নানা দাবিতে মাঠে নেমেছে। পোশাক ও ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরা নানা দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। একেক কারখানায় একেক ধরনের দাবি উঠছে। সরকারের তরফে শুরুতে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়, যৌথ অভিযানও শুরু হয়। তবে এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। প্রতিদিনই বহু কারখানা বন্ধ থাকছে। শ্রমিকনেতারা বলছেন, বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা তৈরি পোশাকশিল্পকে অস্থিতিশীল করতে ভাঙচুর চালাচ্ছে। শ্রমিক বিক্ষোভের আড়ালে তারা শিল্পকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ভাঙচুরে নিরীহ শ্রমিকরা জড়িত নন, বহিরাগতরাই এসব করছে। যেসব দাবির কথা বলা হচ্ছে, ৫ আগস্টের আগে সেসব দাবির কথা শোনা যায়নি। কারখানা মালিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দাবিতে বেশকিছুদিন ধওে পোশক শিল্প এলাকায় বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। বিক্ষোভের জেরে অনেক সময় কারখানায় ভাঙচুর, কারখানার কর্মকর্তাদের মারধরসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। আর এ সুযোগে কিছু বহিরাগত কারাখানায় লুটপাট বা অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বা ঝামেলা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে কারাখাগুলোর কোনোটিতে সাধারণ ছুটি বা কোনোটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তৈরি পোশাকশিল্প কঠিন সময় অতিক্রম করছে। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে একদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা শীত ও গ্রীষ্মের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। রপ্তানি আদেশ যাতে অন্য দেশে চলে যায়, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টে হামলা, ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। রাস্তায় বিক্ষোভ করা হচ্ছে। এ বিক্ষোভের সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকদের দূরতম সম্পর্কও নেই। তিনি আরও বলেন, রপ্তানিমুখী এ শিল্পকে বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মালিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিকনেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হবে। শ্রমিকদের উদ্দেশে হাতেম বলেন, কারও প্ররোচনায় পড়ে কারখানায় ভাঙচুর চালাবেন না। শ্রমিকদের যে কোনো ন্যায্য দাবি সরকার-শ্রমিক-মালিকরা কারখানার অভ্যন্তরে বসে সমাধানে প্রস্তুত আছে। এসব দাবি কারখানাতেই সমাধান সম্ভব। রাজপথে সমাধান নেই।
সূত্র জানায়, আগস্টের বেতন পরিশোধ হয়েছে ৭৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ কারখানায়। মোট ১ হাজার ৫৯৫টি কারখানা মজুরি পরিশোধ করেছে। এখনো বাকি ২৫ দশমিক ৬১ শতাংশ কারখানা, অর্থাৎ ৫৪৯ কারখানায় আগস্টের মজুরি পরিশোধ হয়নি। শ্রম আইন অনুযায়ী, মজুরিকাল শেষ হওয়ার পর পরবর্তী মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে মজুরি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বেতন বকেয়া থাকায় শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন শিল্প পুলিশ প্রধান কার্যালয়ের ডিআইজি সিবগাত উল্লাহ। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে সব কাজ করছে। এখানে সেনাবাহিনীও আছে; আমারা পুরো এলাকা টহলের আওতায় রেখেছি। সমস্যা হচ্ছে বেতন নিয়ে। (শ্রমিকরা) বেতন যদি না পায়, তাহলে এই সমস্যা কীভাবে সমাধান হবে। আশা করছি- পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং বেতন ক্লিয়ার হচ্ছে। তবে ক্ষমতার পালাবদলে পোশাক খাতের লোভনীয় ব্যবসা হিসেবে পরিচিত ঝুট ব্যবসার হাতবদল হচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের পরে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হাত থেকে ব্যবসা বিএনপি সমর্থক পরিচয়ে দখলের নেওয়ার চেষ্টা দেখছেন পোশাক মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা। এমন অভিযোগ পেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও আছে। যেসব এলাকায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ বদল হয়নি; সেখানেই শ্রম অসন্তোষ বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান বলেছেন, হঠাৎ করে রাজনীতি বদলে গেছে। ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত আওয়ামী লীগ নেতারা, এখন বিএনপি নেতারা নিতে চায়। হেতেরাই (তারাই) অভাবী শ্রমিকদের কাজে লাগায়ে বিশৃঙ্খলা করতাছে। সাভারের আশুলিয়া থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, গামের্ন্টস শিল্পে অস্থিরতার পিছনে বহিরাগতদেরও হাত রয়েছে। তারা টাকার বিনিময়ে শ্রমিক সেজে পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ঝুট ব্যবসার হাতবদল নিয়েও আন্দোলনরত শ্রমিকদের উসকে দেওয়ার অভিযোগ আছে। নানা মহলের উসকানি, বহিরাগত হামলাকারী ও ঝুট ব্যবসায়ী- এমনকি বিগত সরকারের মদদপুষ্ট তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের অনেকে সংকটকে কৃত্রিমভাবে জিইয়ে রেখে পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে করে তুলেছে বলে দাবি করছেন তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা। শিল্পাঞ্চল সাভারে শান্তিপূর্ণভাবে সব কারখানা সচল থাকলেও শুধু আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলকে টার্গেট করে একের পর এক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, দেশের পণ্য রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে সেটি বারবার বিপর্যস্ত হতে থাকলে আগামী মৌসুমের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্রয়াদেশ অন্যত্র চলে যেতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন তৈরি পোশাক কারখানার মালিক বলেন, আগের চাইতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি অনেক বেশি। পুলিশ, শিল্পপুলিশ, আর্মডপুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী- কে নেই! বিভিন্ন কারখানার সামনে যেভাবে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান ও র‌্যাবের রায়ট কার মোতায়েন হচ্ছে; দেখে মনে হবে এ যেন যুদ্ধাবস্থা। এই ছবিটা আন্তর্জাতিক ক্রেতা মহলের কাছে নিশ্চয়ই শোভন কোনো বার্তা দেবে না।  তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে ধ্বংস করার জন্য যদি কোনো অদৃশ্য শক্তি সত্যিই পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ে, টাকা ছিটিয়ে দেশীয় এজেন্টদের দিয়ে শিল্পাঞ্চলগুলোকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালায়, তবে সেই অপশক্তিকে খুঁজে বের করা দরকার। মালিক, শ্রমিক ও সরকার সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এর সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার প্রশ্ন যুক্ত। একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি শ্রমিক ও মালিক উভয়ের প্রতিষ্ঠান। দুপক্ষেরই রুজি-রোজগারের স্থান। শিল্প যাতে ধ্বংস না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার উভয়েরই। এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশের এই খাত ধ্বংস হয়ে গেলে মালিক-শ্রমিকসহ সারা দেশের অর্থনীতি ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেকোনো মূল্যে এই খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]