ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: নতুন কোনো ইটাভাটার অনুমতি নয়, ৩ হাজার ৪৯১ টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা      রাজধানীতে তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী      নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াতের নির্দেশে বেনাপোল বন্দর পরিদর্শনে তদন্ত কমিটি      সাভার মডেল থানায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধে আরো দুটি হত্যা মামলা      নেত্রকোনায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশত      




ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা; সুদে-আসলে ফেরত দিতে হবে ভাতা
এসএম শামসুজ্জোহা
Published : Thursday, 19 September, 2024 at 11:20 AM
বিগত সময়ে যাচাই-বাছাই না করে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। এই সুযোগে তাদের অনেকের আত্মীয়-স্বজন বাগিয়ে নিয়েছেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও চাকরি। অনেকে হয়েছেন আবার ক্ষমতাবান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই তালিকায় কাটছাঁট করে স্বচ্ছ একটি তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের করা তালিকাতেও ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকে পড়ে। মন্ত্রণালয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ যাওয়া প্রায় আট হাজার ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার পরিবর্তন হলেই মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। বিভিন্ন সরকারের সময় এ পর্যন্ত পাঁচটি তালিকার খবর পাওয়া যায়। সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। ১৯৮৬ সালে এরশাদের আমলে জাতীয় তালিকায় (গেজেট হিসেবে প্রকাশিত হয়নি) এ সংখ্যা ছিল এক লাখ দুই হাজার ৪৫৮। ১৯৯৪ সালে বিএনপির আমলে নতুন তালিকাভুক্ত হন ৮৬ হাজার। আর মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন।

জানা যায়, জালিয়াতি, প্রতারণা ও অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে যারা সরকারি ভাতা নিয়েছেন; তাদের সেই ভাতা সুদে-আসলে ফেরত নেবে নতুন সরকার। একই সঙ্গে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা যারা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, তাদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত আট হাজার। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আগামী সপ্তাহ থেকে সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হবে। এসব ব্যক্তির কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা ফেরত নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা রাখা হবে। এ বিষয়ে সরকারি পাওনা আদায় আইন, ১৯১৩’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব রথিন্দ্রণাথ দত্ত জানান, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে আট হাজার ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়েছে। তারা বিগত দিনগুলোতে যে ভাতা নিয়েছিলেন তা সুদে-আসলে আদায় করা হবে। এছাড়া ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে প্রচলিত আইনে মামলা করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, শুধু যারা ভুয়া সনদ নিয়েছেন; তাদের নয়, যারা এসব সনদের জন্য সুপারিশ করেছেন, সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ফৌজদারি আইনের ৪১৬ ধারা অনুযায়ী- মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিলে তা অপরাধ। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য তিন বছর জেল এবং মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দেখিয়ে ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিলে সাত বছর পর্যন্ত জেল হওয়ার কথা; আর মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নেওয়ায় অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের।

ইতোমধ্যেই সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীরপ্রতীক তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে কতজন সরকারি চাকরিতে আছেন তাদের তালিকাও তৈরি করতে বলেছেন। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও জামুকা।

জামুকা সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাসহ ভাতা চালু করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের করা তালিকাতেও ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকে পড়ে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসার পর অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এবার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া প্রায় আট হাজার ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার।

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত সাতবার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে; আর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় অন্তুর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বয়স, সংজ্ঞা ও মানদন্ড পাল্টেছে ১১ বার। বর্তমানে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। তা ছাড়া দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, বিজয় দিবসে পাঁচ হাজার টাকা এবং বাংলা নববর্ষে দুই হাজার টাকা ভাতা পান। একজন বছরে সব মিলিয়ে পান প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা নামগুলো যাচাই-বাছাই শেষে মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় কাউন্সিলে পাঠান। তারপর মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট প্রকাশ করা হয়। প্রমাণ হওয়ায় ভুয়া আট হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্তি এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম বাতিল সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলমান আছে। 

তবে জামুকার কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ২০১৪ সালে আগে যেসব মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকায় আসেনি তাদের আবেদনের সুযোগ দিলে সারাদেশে অসংখ্য আবেদন জমা পড়ে। এমনকি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম তালিকাভুক্তির আবেদন করেন। তবে ২০১৪ সালেই পাঁচ জন সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে সরকার। যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তখন সনদ বাতিলের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। যদিও দেশে প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত তা নিয়ে বহুদিন ধরে অস্পষ্টতা রয়েই গেছে। 

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে তিন দফায় চেয়ারম্যান থাকা আব্দুল আহাদ চৌধুরী বলছেন, যারা ভুয়া সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠিয়েছিল  তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি তাদের মধ্যে যারা ভাতা পেয়েছে তাও ফেরত আনা উচিত। এরপর বের করতে হবে ভুয়া সনদধারীদের কারা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসার সুযোগ করে দিয়েছে। তাদেরকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুয়া সনদধারীদের দেয়া বেনিফিট ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা উচিত সরকারের। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে ২০ হাজার জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হতো। যা পরে বিভিন্ন সময় বাড়ানো হয়েছে। এখন মুক্তিযোদ্ধারা মাসে বিশ হাজার টাকা করে সম্মানী পান। সম্প্রতি এ টাকা ত্রিশ হাজারে উন্নীত করার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি চাকরিজীবী হলে এখন দুই বছর বেশি চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসা, আবাসন ও রেশনসহ নানারকম সুযোগ-সুবিধা আছে। এসব সুবিধা পেতে অনেকেই এখন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসতে চান বলে অভিযোগ আছে।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]