ই-পেপার বাংলা কনভার্টার মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র      ঢাকা কলেজের শঙ্খনীল বাস ভাঙল আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা      সৈকতে ভেসে এলো আরও এক জেলের দেহ      সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে সাফি ৪ দিনের রিমান্ডে      




জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান থেকে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রত্যয় শিক্ষার্থী ও পরিবেশবিদদের
Published : Saturday, 7 September, 2024 at 12:51 PM
ঢাকা মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, ইটকাঠের এই তিলোত্তমা নগরী ঢাকার বুকে একটুকরো সবুজ ভূমি। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিরাজি, প্রাকৃতিক পরিবেশে আশ্রয় পেয়েছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, এখানে ৪৫ প্রজাতির ফড়িং ৭৬ প্রজাতির প্রজাপতি, ১০ প্রজাতির উভচর, ১৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৪০ প্রজাতির পাখি এবং ১২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর বসবাস এই উদ্যানকে ঘিরে। কিন্তু ভালো নেই এই উদ্যানের প্রকৃতিক পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীরা।

বাংলাদেশের প্রকৃতিপ্রেমী সাধারণ শিক্ষার্থী, প্রকৃতি নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন সকলে মিলে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের কর্তৃপক্ষের সহায়তায় বন্যপ্রাণী গবেষক পরিবেশ বিদ ও লেখক আশিকুর রহমান সমীর নেতৃত্বে আয়োজন করেছে সচেতনতা মূলক বিশেষ আয়োজন করেছে ওয়াইল্ড ওয়াক।

যেখানে জনসাধারনের মধ্যে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের বন্যপ্রাণী তথা জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দূষণমুক্ত করণ এর উপর সচেতন করা হয়।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ সহ সারাবাংলাদেশ এবং ধরিত্রীর জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে শিক্ষার্থীরা শপথ গ্রহন করে। পরিবেশ কে দূষন মুক্ত রাখা, প্রাণিকল্যান এবং জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে তারা বদ্ধ পরিকর হয়। এ উদ্দেশ্যে সকলে মিলে একসাথে শপথ বাক্য পাঠ করে। বাংলাদেশের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনলাইন প্লাটফর্মের আয়োজনে শিক্ষার্থীরা এখানে অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী) থেকে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি ছিলো বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী ও পরিবেশ বাদী সংগঠন ( বেঙ্গল ডিসকাভার, ডীপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন, সেভ ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড নেচার, বাংলাদেশ ইনভারনমেন্টাল এন্ড বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন এলাইয়েন্স, আন্তর্জাতিক সংস্থা এওয়ারনেস ৩৬০ ডিগ্রি ছিলো এই আয়োজনের সহ আয়োজক। আর সার্বিক সহযোগিতায় ছিলো জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান কর্তৃপক্ষ।

পরিবেশ বাদী সংগঠন গুলোর সদস্যরাও এখানে অংশগ্রহন করেন।

সকালে বন্যপ্রাণী সার্ভের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে এখানে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি উদ্যানে উপস্থিত সাধারণ জনগনকে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভুদ্ধ করে। উদ্যানে জীব বৈচিত্র্যের নিরাপত্তার পরিপন্থী সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয় সকলকে। পাশাপাশি সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার শূন্য করা এবং একমাসের মধ্যে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানকে সম্পূর্ণ প্লাস্টিক দূষন মুক্ত করার ঘোষণা দেন।

ওয়াইল্ড ওয়াক শেষে শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয় এবং সেখানে নিজেদের প্রত্যাশা তুলে ধরে। তারা জীব বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয় গুলোকে বইয়ের মুখস্থ বিদ্যার পাশাপাশি প্রয়োগ গত বিষয় গুলো তুলে ধরার আহ্বান জানায়। কোর্স গুলো আরও বস্তব সম্মত হওয়া এবং উন্নত বিশ্বমানের হওয়ার উপর গুরুত্ব দিতে দাবী জানানো হয়। বিষয় ভিত্তিক অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের জোড় দাবী জানানো হয়। বিষয় সংশ্লিষ্ট চাকরি গুলোর পরিধি আরও বৃদ্ধির দাবী জানায়। জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট বিষয় স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রস্তাব তোলা হয়।

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে জোড়ালো যে দাবীটি জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে আলাদা বিভাগ থাকলেও বাংলাদেশে মাত্র ৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পর্যায়ে বন্যপ্রাণী জীববিদ্যা প্রানিবিদ্যা বিভাগের শাখার একটি অংশ। আর বর্তমানে দেশে ও বিদেশে অনেক সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশে এই বিষয়টি উপেক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হাজারো শিক্ষার্থীর এই বিষয়টিতে পড়ালেখা করার আগ্রহ থাকলেও সুযোগ পায়না। যার ফলে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবীতে পরিনত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী জীববিদ্যা বিষয়টি আলাদা স্বতন্ত্র বিভাগ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করা। এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেখানে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠান টি পরিচালনা করেন প্রাণিবিদ্যা প্লাটফর্মের মডারেটর মো. মোস্তফা আদনান। সহযোগিতায় ছিলো, দীপ্ত বিশ্বাস, মেহেদী হাসান তারেক, জাহিদুজ্জামান খান, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. আশিকুর রহমান, তানজিল সেতু সহ প্রানিবিদ্যার শিক্ষার্থীরা।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক, মো. শওকত ইমরান আরাফাত, বন্যপ্রাণী পরিবেশবিদ গবেষক ও লেখক আশিকুর রহমান সমী, প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক আফতাব উদ্দীন সুজন, পাখিবিদ ও আলোকচিত্রী মো.তারিক হাসান, বন্যপ্রাণী বিষয়ক লেখক সরোয়ার পাঠান, বাংলাদেশ-পশ্চিম বঙ্গের জনপ্রিয় লেখক বাপ্পি খান, ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং প্রাণি সংরক্ষনবিদ মাহফুজুর রহমান, বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক ও লেখক, বেঙ্গল ডিসকাভার এর এডিটর ইন চিফ আমিনুল ইসলাম মিঠু, প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ দীপ্ত বিশ্বাস।

বক্তব্যে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানকে প্রাকৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ, দূষন মুক্ত, প্লাস্টিক বর্জ মুক্ত, জীব বৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণীর বসবাস উপযোগী এক উদ্যানে পরিনত করার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলাশয় গুলোকে আরও জীব বৈচিত্র্যের বসবাস উপযোগী করার জন্য তুলে ধরা হয়। উদ্ভিদ উদ্যানে প্রকৃতি প্রেমী ও গবেষক দের প্রবেশ ফি কমানোর জন্য জানানো হয়। পাশাপাশি উদ্ভিদ উদ্যানে দূষণকারী ব্যক্তিবর্গ কে উপযুক্ত জরিমানা প্রদানের দাবী জানানো হয়। বাংলাদেশে প্রতি জেলায় এমন একটি উদ্যান রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক, উদ্ভিদ উদ্যানটিকে শিক্ষার্থী ও সকল পরিবেশ বাদী, গবেষকদের নিয়ে একটি আদর্শ সংস্থায় পরিনত করার প্রচেষ্টার কথা এবং কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কথা ব্যক্ত করেন।

আশিকুর রহমান সমী, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের জীব বৈচিত্র্যের তথ্য এবং এর ঝুঁকি উপস্থাপন এর পাশাপাশি এর জীব বৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের নানা দিক তুলে ধরেন। একদশকের ব্যবধানে এখানকার জীব বৈচিত্র্য অর্ধেকে নেমে এসেছে, প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রাণিবিদ্যার সাধারণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে প্রাণিবিদ্যার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণায় আশিকুর রহমান সমীর অবদান কে সম্মান জানিয়ে একটি সম্মাননা স্বারক তুলে দেন।

পাশাপাশি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সকল স্থাপনায় জীব বৈচিত্র্য উপযোগী আবাসস্থল ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় করা হয়।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]