ই-পেপার বাংলা কনভার্টার মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র      ঢাকা কলেজের শঙ্খনীল বাস ভাঙল আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা      সৈকতে ভেসে এলো আরও এক জেলের দেহ      সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে সাফি ৪ দিনের রিমান্ডে      




অনুসন্ধান টিমের নজরদারি: দুদকের জালে তিনশ’ প্রভাবশালীর তালিকা
এরই মধ্যে দেড় ডজন ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে
এসএম শামসুজ্জোহা
Published : Saturday, 7 September, 2024 at 11:59 AM
ক্ষমতার পালাবদলে নখদন্তহীন দুদক তার জাত চেনানোর সুযোগে লম্বা তালিকা করে ভিআইপি দুর্নীতিবাজদের ধরতে কাজ শুরু করেছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনের শীর্ষ পদে থাকা কর্তাদের সম্পদের খোঁজে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন শিগগিরই তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করতে নানা আইনি কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে এক ডজন শক্তিশালী অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে দুদক। কমিশনের বর্তমান তৎপরতার ধারাবাহিকতায় গত দুই সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী অর্ধশত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেড় ডজন ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং নজরদারিতে দুর্নীতিবাজ তিন শতাধিক রাঘব-বোয়ালের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, আমলা-সচিব, ঊর্ধ্বতন সাবেক-বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন। 
এছাড়া সংস্থাটির গোয়েন্দা ইউনিটের তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ের অভিযোগ গ্রহণ করে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতি-সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবদের সম্পদের তথ্য তলবের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই প্রক্রিয়া। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবদের সম্পদের তথ্য তলবের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই প্রক্রিয়া। এরপর তদন্তের আওতায় আসবেন সাবেক জনপ্রশাসন সচিব ও জ্বালানি সচিবরা। এর বাইরে আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন আমলার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, ব্যাংক ও শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, কমিশন বাণিজ্য, সরকারি ও বেসরকারি জমি-সম্পত্তি দখল, লুটপাটসহ দুর্নীতির নানা অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, বিগত ১৫ বছরে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন আমলারা। বিভিন্ন সময়ে অনেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তবে বিভিন্ন মহলের চাপের কারণে এতদিন সেসব অভিযোগ নিয়ে কাজ করতে পারেনি সংস্থাটি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন সেসব অভিযোগ অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দীর্ঘদিন লাল ফিতায় বন্দি থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। 
সূত্র জানায়, গত সরকারের কয়েক ডজন প্রভাবশালী আমলার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। চাকরি জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে মালিক হয়েছেন শত শত কোটি টাকার। এসব অবৈধ অর্থে তারা দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। কারও কারও রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির বিপুল পরিমাণ শেয়ার। দেশের বিভিন্ন জায়গায় জমি আছে অনেকের। এসব সম্পদের বেশিরভাগই স্ত্রী, সন্তান কিংবা আত্মীয়স্বজনদের নামে। অনেকেই চাকরি শেষে নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে। কেউ কেউ গড়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কয়েকজন আবার দেশ ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। কারও কারও বিরুদ্ধে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে দুদকে ফাইলবন্দি ছিল। সরকারে ওপর মহলের চাপে তাদের বিষয়ে কোনো কাজ করা যায়নি। ক্ষমতার পালাবদলে সেসব ফাইল নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে দুদক। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব অভিযোগ নিয়ে কাজ করা হবে। দুদকের একজন উপপরিচালক বলেন, অনুসন্ধান তালিকায় প্রথমদিকে রয়েছেন বিগত সরকারের আমলের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবরা। এসব শীর্ষ আমলা বিগত সরকারের আমলে অনেক প্রভাবশালী ছিল। তারা তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই সাবেক এই আমলাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হবে। 
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, তৎকালীন সরকারের মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, দুর্নীতি ও পাচারের ঘটনার অভিযোগ বিভিন্ন সময় দুদকের কাছে এলেও সংস্থাটির চেয়ারম্যান/কমিশনাররা তাদের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ না নিলেও এবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে ১২টির বেশি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। সংস্থাটির গোয়েন্দা ইউনিটের তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায় থেকে অভিযোগ গ্রহণ করে ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো যাচাই বাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এদিকে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ভাষ্যমতে, সরকারি দল ক্ষমতায় থাকার কারণে নানা সময়ে দুদকে অভিযোগ আসলেও তা আমলে নিয়ে কাজ করতে পারেনি দুদক। তবে এখন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার থাকায় কোনো চাপ নেই। যেকোনো দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে পারছে দুদক।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন জানান, দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক না কেন- যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের তপশিলভুক্ত অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হলে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে, কোর্টে মামলা দাখিল করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক; কাউকেই ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ ও সরকারের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ১০টি দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের ৩৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কমিশন।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমলাতন্ত্রের প্রভাব থেকে দুদককে মুক্ত করতে হবে। দুদকের আইনের সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া দুদকের দুর্বলতা চিহ্নিত করে এর সমাধান করতে হবে। নয়তো নতুন নতুন অনুসন্ধান শুরু হলেও এর সুফল মিলবে না। দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, কমিশন চাইলেই সম্ভব। গত ১৫ বছরে যেসব অনুসন্ধান দুদক করতে সাহস পায়নি; এখন সেসব অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এটি ইতিবাচক। তবে দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে দুদককে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]