ই-পেপার বাংলা কনভার্টার মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র      ঢাকা কলেজের শঙ্খনীল বাস ভাঙল আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা      সৈকতে ভেসে এলো আরও এক জেলের দেহ      সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে সাফি ৪ দিনের রিমান্ডে      




কালোটাকা উদ্ধারে মন্ত্রণালয় ও জেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন হবে
শিগগিরই সাঁড়াশি অভিযান: মাঠে নামছে সরকার
এসএম শামসুজ্জোহা
Published : Wednesday, 21 August, 2024 at 12:25 PM, Update: 21.08.2024 12:34:42 PM
দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও কালোটাকা উদ্ধারে শিগগিরই যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে অভিযান পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মন্ত্রণালয় ও জেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানের ছক করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানের জন্য একটু সময়কাল বিলম্ব হলেও আটঘাট বেঁধে মাঠে নামবে ২১ সদস্যের নতুন সরকার।

গেল সরকারের আমলে রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশায় থাকা কিছু সুযোগসন্ধানী দুর্নীতিবাজ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সাধারণ জনতার দাবি ওঠে, অপকর্মে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। সূত্রমতে, ১-১১ এর সরকারের আদলে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যৌথ বাহিনীর একাধিক অফিস করা হবে। এ কাজে সেনাবাহিনী, প্রশাসন, দুদক, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। আর এককভাবে আইনগত পদক্ষেপ নেবে দুদক। অন্যরা সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দেবে।

গত ৫ই অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগপন্থি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুবিধাভোগী আমলা ও ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। দেশ ছাড়ার সুযোগ নিয়েছেন অনেকেই। অনেকে পারেননি। এছাড়া জীবন রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া কিছুসংখ্যক প্রভাবশালী ছিলেন সরকারি হেফাজতে। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় এবং কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১-১১ এর সেনা সমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। তখন আতঙ্কে দুর্নীতিবাজদের অনেকেই রাস্তায় গাড়ি ও টাকার ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার নজির আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ১৯৯৬ ও ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন আর ৮ জুলাই নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট এক নয়। এবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে খোদ সরকারপ্রধান জীবন বাঁচাতে পালিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন দখলে নিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট চালায়। থানা-পুলিশও আক্রোশের শিকার হয়। দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চলে অনেক মন্ত্রী-এমপির বাড়িতে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা এখনো পলাতক। সরকারি আলটিমেটাম অনুযায়ী তারা কর্মস্থলে যোগ দেননি। এরকম এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে স্থিতিশীল করতে কাজ করছে। বিশেষ করে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়া এবং বেশ কয়েকদিন পুলিশ ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা নজিরবিহীন। পুলিশকে কাজে ফিরিয়ে বাহিনী পুনর্গঠনের জন্যই এবার যৌথ অভিযান এখনো শুরু করা যাচ্ছে না। তবে শিগগিরই অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে। অভিযান দেরিতে শুরুর আরেকটি কারণ হচ্ছে, ১-১১ এর সরকার তড়িঘড়ি অভিযান চালাতে গিয়ে রাতারাতি যাদের ধরে জেলবন্দি করে মামলা দিয়েছিল সেসব বেশিরভাগ মামলা আদালতে টেকেনি। ফলে এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান হবে ভিন্নরকম। যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যৌথবাহিনীর একটা অভিযান হতেই পারে। তবে এই অভিযানে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে সবার কাছে মেসেজ পৌঁছায় অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না। তাহলে যৌথ অভিযান জনসমর্থন পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগের তুলনায় এবারকার অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গণআন্দোলন, বিদ্রোহ, বিপ্লব যাই বলেন, এর মাধ্যমে সরকারের পতন হয়েছে। এখন যারা ক্ষমতায় বসেছেন তারা সবকিছু গুছিয়ে জেলাভিত্তিক নির্দেশনাগুলো দেবেন। যৌথ অভিযান শুরু করতে দেরি হচ্ছে- এমনটা আমার মনে হয় না।

জানা গেছে, ১-১১ এর আদলে এবারও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর-অধিদপ্তর ও জেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করা হতে পারে। টাস্কফোর্সের মূল দায়িত্বে থাকবেন সেনা সদস্যরা। এলাকাভিত্তিক বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ তাদের কাজে সহযোগিতা করবে। আর দুর্নীতিবাজদের আইনের মুখোমুখি করে সাজা নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব পালন করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাই টাস্কফোর্সের অভিযানের আগেই সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানো হবে। যে কোনো দিন দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা পদত্যাগের নির্দেশনা পেতে পারেন। ইতোমধ্যেই টাস্কফোর্সের অভিযানসংক্রান্ত কাজে যুক্ত করতে বিভিন্ন বাহিনীর সৎ ও মেধাবী অফিসারদের বাছাই করে তালিকা করা হচ্ছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দরকারি সব প্রস্তুতি শেষে সরকারের তরফ থেকে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা আসতে পারে।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানান, যৌথ অভিযানের ছক চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ১-১১ এর সরকারের আদলে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যৌথ বাহিনীর একাধিক অফিস করা হবে। এ কাজে সেনাবাহিনী, প্রশাসন, দুদক, পুলিশ, র‌্যাব বিজিবি সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। আর এককভাবে আইনগত পদক্ষেপ নেবে দুদক। অন্যরা সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দেবে। দ্রæততম সময়ের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। আগের অভিযানগুলোতে দুর্নীতিবাজরা যেমন ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে এবার সেই সুযোগ থাকবে না। তাই একটু বিলম্ব হলেও আটঘাট বেঁধে মাঠে নামবে। অভিযানে যারা গ্রেফতার হবেন তাদের বিরুদ্ধে সব মামলা করবে দুদক।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১-১১ এর সেনা সমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। তখন আতঙ্কে দুর্নীতিবাজদের অনেকেই রাস্তায় গাড়ি ও টাকার ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার নজির আছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সারা দেশে অভিযানে নেমেছিল যৌথবাহিনী। তখন ভয়ে অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। আবার অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু এবার এখনো সে ধরনের কোনো অভিযান দেখা যাচ্ছে না। খুব দ্রুত সন্ত্রাস দমন ও দুর্নীতিবাজদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালালে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরবে। তবে বিলম্বিত অভিযান, দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের রক্ষার সুযোগ করে দিতে পারে।

দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও কালোটাকা উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর এ অভিযানের উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। আমরা মনে করি, এ অভিযানের মাধ্যমে দলমতনির্বিশেষে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সবার কাছে বার্তা পৌঁছায়, অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না। আগের অভিযানগুলোয় দুর্নীতিবাজরা যেমন ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে; এবার তারা যেন সেই সুযোগ না পায়।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]