ই-পেপার বাংলা কনভার্টার মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র      ঢাকা কলেজের শঙ্খনীল বাস ভাঙল আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা      সৈকতে ভেসে এলো আরও এক জেলের দেহ      সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে সাফি ৪ দিনের রিমান্ডে      




তরুণদের হাতেই হোক নিরাপদ সড়ক
তরিকুল ইসলাম
Published : Monday, 12 August, 2024 at 12:14 PM
আজ ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস। অন্য বছরের যুব দিবসের তুলনায় এছরের যুব দিবস একটু অন্যরকমভাবে পালিত হচ্ছে। অন্য বছরে যুব দিবসে তরুণদের নিয়ে অনেক ঢাক-ঢোল বাজিয়ে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালিত হতো। কিন্তু এবারের যুব দিবসে এসব অনুষ্ঠানে তরুণদের দেখা না গেলেও একটি সোনার বাংলা গড়তে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজে তাদেরকে দেখা যাচ্ছে। গত ৬ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে নিজেরাই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ঠিক নিয়ম মেনে সড়কে লেন ভেদে গাড়ি পরিচালনা করছে। তাদের নির্দেশনাও মানছেন যানবাহন চালকসহ পথচারীরা। দেশের সিস্টেমে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। এভাবেই যদি আমরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সড়কে চলতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, সিটবেল্ট ব্যবহার ও মানসম্মত হেলমেট পরিধান করি তাহলে সড়ক দুর্ঘনা রোধ (রোডক্র্যাশ) এবং মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

দেশে প্রতিদিন সড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা দেশে ৫ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৫ হাজার ২৪ জনের মৃত্যু হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৪৯৫ জন আহত হয়েছে বলেও জানায় বিআরটিএ।

বাংলাদেশেও এই চিত্র ভিন্ন নয়। সারাদেশময় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর এই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে নানা বয়স ও পেশার মানুষ। যান্ত্রিক যুগের মানুষ ধেয়ে চলছে যান্ত্রিক গতিতে। সেই যান্ত্রিক যানের তলায় পড়ে আবার জীবনও দিতে হচ্ছে তাকে। কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটোছুটি স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাটে, যন্ত্র দানবের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে সেই আবিষ্কারক মানুষকে। মানব সভ্যতায় এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্যময় চিত্র। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব’।

গতির নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকলেও তারা তা মানতে চান না চালকেরা। এমন কী মদ্যপ অবস্থায়ও গাড়ি চালান কেউ কেউ। ফলে জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে। আবার প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চালানোর জন্যও ঘটে অনেক দুর্ঘটনা। ওভার টেক করে আগে যাওয়ার প্রবণতাও সড়ক দুর্ঘটনার কম দায়ী নয়।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউট (এ আর আই) এর এক গবেষণা বলছে, ফুটপাতে ২৬ ধরনের সমস্যা আছে যা পথচারীকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে। আর এসব সমস্যার কারণে মানুষ চলে আসে রাস্তায়, রাস্তা হয় সংকীর্ণ, সৃষ্টি হয় যানজটের। এ অবস্থার নিরসন হওয়া দরকার, রাস্তায় সুন্দর, প্রশস্ত ফুটপাত দিতে হবে, ফুটপাতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’ এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১১ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ নিহত হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। বিশ্বব্যাপী ৫-২৯ বছর বয়সের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতি মিনিটে ২ জনের বেশি এবং প্রতিদিন কমপক্ষে তিন হাজার ২০০ জনের মৃত্যু হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়।

প্রতিদিন সংবাদপত্রে খুব সম্ভব একটি কলাম খালি থাকে, সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ ছাপা হবে বলে। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো সচেতনতার অভাব। অসতর্কতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, যান্ত্রীক ক্রটিসম্পন্ন গাড়ি রাস্তায় ব্যাবহার, গাড়ির ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী ও মালামাল বহন করা, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন মেনে না চলা, গাড়ি চালনার সময় ফোনে কথা বলা ইত্যাদি কারনেও সড়কে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বেপরোয়া গাড়ী চালানো বন্ধ করতে ও পথচারীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে তাই দরকার একটি সম্পুর্ণ পৃথক ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’। 

সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু রাষ্ট্রের বা চালকদের দায়িত্ব নয়, বরং দেশের সকল মানুষের দায়িত্ব। পথচারী থেকে শুরু করে সকল নাগরিকের দায়িত্ব। সবাইকে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাস্তায় বের হলে মৃত্যু ভয় যেন তাড়া করছে মানুষের মনকে। সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন আবাল-বৃদ্ধ, শিশু। কেউ নিহত, কেউ আহত। কেউ আহত হয়ে অচল হয়ে বেঁচে আছেন। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে নগরী, মহানগরী, শহর, মফস্বল, মহাসড়ক সবখানে। যেহেতু প্রতিদিনই ঘটছে সেহেতু আমি-আপনি যে কেউ, যে কখন দুর্ঘটনায় পড়ে যাব তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে সেদিকে সকলের দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে-মনে রাখতে হবে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তবেই নিরাপদ হবে সড়ক। কমবে মৃত্যুর মিছিল। আচরন গত ঝুঁকির কারণসমূহ বিবেচনা রেখে একটি নতুন সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সুতরাং সড়ক নিরাপত্তার দাবীতে একটি সম্পূর্ন পৃথক আইন এখন সময়ের দাবী।

পরিশেষে, তরুণদের কাছে আমার দাবি ট্রাফিক আইন যেন সর্বাত্মক মান্য করা যায় সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে, কঠোর করতে হবে ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নিশ্চিত করতে হবে আইন অমান্যকারীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও হেলমেট পরিধান করা। বন্ধ করতে হবে সড়কে চলা-চলের সময় মোবাইলে কথা বলা ও হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা। এছাড়া পরিহার করতে হবে প্রতিযোগিতা, ওভারটেকিং, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো ও ফাঁকা থাকলেও মাঝপথ দিয়ে গাড়ি চালানো। আবার, ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করতে হবে হকারদের কাছ থেকে, যেখানে পথচারীরা ফুটপাথ ব্যবহার না করে রাস্তায় নেমে হাঁটতে থাকে। প্রচার চালাতে হবে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য।

লেখক: তরিকুল ইসলাম
অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন) 
রোড সেইফটি প্রকল্প, 
স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]