ই-পেপার শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
শিরোনাম: মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ও ফেসবুক চালুর বিষয়ে যা জানা গেলো       নেপালে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ১৮       আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সব নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী       খুলেছে অফিস-আদালত, গণপরিবহন সংকটে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি        বান্দরবানে কেএনএফের দুই সদস্য নিহত       লাখাইয়ে রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত কৃষক       ভৈরবে কোটা আন্দোলনকারী ও র‌্যাব-পুলিশের সংঘর্ষ, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ       




বাজেট ২০২৪-২৫
সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ
Published : Thursday, 6 June, 2024 at 3:45 PM, Update: 06.06.2024 4:46:45 PM
দুই বছর ধরেই দেশে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। কীভাবে মানুষের দিন যাচ্ছে তা কেবল সাধারণ মানুষই জানেন। করোনা পরবতী থেকে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছেই। চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসেই সরকার বললো, নিত্যপণ্যে দাম মানুষের নাগালে আনাই তাদের প্রধান কাজ হবে। মানুষ আশাম্বিত হয়েছিল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে সব কিছুর দাম বাড়ছেই। নানা অজুহাতে দাম বাড়ছে। এর দায় কেউ নেয় না। সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

১ জুন থেকে সরকার ফের জ্বালানি তেলের দাম সংশোধন করেছে। বাড়ছে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল এবং কেরোসিনের দাম। এখন দাম বাড়ানোর নতুন নাম হয়েছে, সমন্বয় করা। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমলেও এ মাসে দেশের বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি পেল। অনলাইন পোর্টাল অয়েল প্রাইসের তথ্য অনুযায়ী গত এক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের গড় মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৮৮ ডলার থেকে ৮৩ ডলারে নেমেছে।

আমাদের দেশের সরকার বলছে, বিশ্ববাজারে পেট্রোলিয়ামের দাম কমলেও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে স্থানীয় বাজারে জ্বালানির দাম বেড়েছে। তাই, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ০.৭৫ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা; পেট্রোলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে নতুন দাম ১২৭ টাকা এবং অকটেনের দাম প্রতি লিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১৩১ টাকা করা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক খাত ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ভর্তুকি না দিলে আগামী বছরগুলোতে সরকার ও জনগণ উভয়েরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

আমরা সবাই জানি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি মানে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি। এই মূল্যবৃদ্ধি ন্যায্যতার ভিত্তিতে যৌক্তিক পন্থায় করা হচ্ছে না। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে যে যেখানে যেভাবে পারছে পণ্য ও সেবার দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। সরকার বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে বিক্রি হয় না। হচ্ছেও না।

মনে হচ্ছে, সরকার জ্বালানি খাতকে তার বড় আয় ও লাভের খাত হিসেবে দেখে। দেশের শিল্প ও কৃষিখাত যেভাবে জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার শিকার এবং সরকার ভর্তুকি দেবে না বলে সেসব জায়গায় যেভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছে, তাতে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত সর্বনাশের শিকার হতে হবে সরকার এবং জনগণ উভয়কেই।

বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় বর্তমানে ডিজেল লিটারপ্রতি ৯০.৭৬ রুপি বা ১২৫ টাকা ৭০ পয়সা এবং পেট্রোল ১০৩.৯৪ রুপি বা ১৪৩ টাকা ৯৬ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।

আসন্ন বাজেটে সরকারের উচিত হবে বিদ্যুৎ খাতের চেয়ে জ্বালানি খাতে বেশি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া। আজ শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাচ্ছে, গ্যাস সরবরাহ কমে যাচ্ছে। শিল্পায়ন না হলে বা দেশের শিল্পের উৎপাদন না হলে দেশের উন্নয়ন হয় না, জ্বালানি হচ্ছে অর্থনীতির চালিকাশক্তি, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে বাকি সবকিছু বাদ দিয়ে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতেই হবে, যাতে আমাদের অর্থনীতি টিকে থাকবে। সুতরাং বর্তমানে আমাদের মূল সংকটই হলো জ্বালানি সংকট।

সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করে দেওয়া। জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে মান বৃদ্ধি করতে পারলে সমাজে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। দিন যত যাচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় তত বাড়ছে। কিন্তু ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আয় বাড়ছে না। ফলে সংকট দেখা দিচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারে। সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছে স্থির আয়ের মানুষ।

আজ জাতীয় বাজেট পেশ করা হবে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, নতুন অর্থবছরে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। কারণ আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আদায়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আগামী বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করহার ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেলেও বাড়ানো হচ্ছে না করমুক্ত আয়সীমা। বর্তমানে ৩৭ লাখ ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে থাকেন।

এর মধ্যে বড় অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির করদাতা। এই শ্রেণির করদাতাদের জন্য বাজেটে আয়কর খাতে ছাড় থাকছে না। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও আয়কর আদায়ের কথা চিন্তা করে বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। তবে করদাতা হয়রানি কমাতে আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের বিধান বাতিল করা হচ্ছে।

আবার অনেক পণ্যে ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ করায় এর প্রভাব পড়বে বাজারে। অন্যদিকে চাল, গম, ভুট্টা, সরিষাবীজ, পরিশোধিত সয়াবিন, পাম অয়েল, সানফ্লাওয়ার বীজ, তুলাবীজ, বিভিন্ন শাক-সবজির বীজ, ক্রুড অয়েল, সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিটুমিন, কয়লা, জিপসাম, ভিটামিন, ইনসুলিন, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের অত্যাবশ্যক ওষুধ এবং ভ্যাকসিন ও ওষুধের কাঁচামাল, বিভিন্ন ধরনের দরকারি রাসায়নিক ইত্যাদির ওপর বসতে যাচ্ছে বাড়তি শুল্ক। পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে বা ইন্টারনেট ব্যবহারে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ।

তবে ভোক্তাদের স্বস্তিতে রাখতে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ভোগ্য পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্তই নয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নাকাল মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তরাও। বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। অন্যদিকে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চাহিদায় কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সর্বশেষ তথ্য মতে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ, যা এক বছর আগেও এর অর্ধেক ছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা এবং ডলারের সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়নের বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্যাক্সের পরিমাণও বেড়ে যায়। এতেও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে। ফলে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য, যেগুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, সেগুলোতে করের বোঝা শূন্য কিংবা সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত।

সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করে দেওয়া। মানুষের যাতে ক্রয়ক্ষমতা ও আয়-রোজগার বাড়ে, সেটার ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি আরও বাড়ানোর বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বাজেট প্রস্তাবে সংকট সমাধানের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ থাকতে হবে। আসছে অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির কারণে বিপাকে পড়া মানুষকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক। 







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]