ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রোববার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
ই-পেপার রোববার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতকে কড়া বার্তা দিলেন ড. ইউনূস       দ্রুত সময়ের মধ্যে গুম খুনের আসামি হাসিনার বিচার করতে হবে : মামুনুল হক      নওগাঁয় বজ্রপাতে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু       কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস      বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রীষ্মের রেকর্ড গড়লো ২০২৪      ঢাকায় এসেছেন কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান      পরিত্যক্ত অবস্থায় পুলিশের লুটকৃত অস্ত্র উদ্ধার      




গাড়োয়ান ফিরে এলেও ফেরেননি সাত সূর্য সন্তান
Published : Friday, 24 May, 2024 at 1:41 PM
১৯৭১ সালের ২০ মে, বুধবারের রাত। ঠাকুরগাঁও ইপিআর ক্যাম্প থেকে আসা পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর একদল সৈন্য সেই রাতে ঘেরাও করেছিল খানকা শরীফের ইসলাম নগর মহল্লাটি। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত ইসলাম নগর। ঠাকুরগাঁও স্টেশন রোডে অবস্থিত ইসলাম নগরের খানকা শরীফকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভীষণ ভয় পেতো। ফলে তারা কখনোই খানকা শরীফের উপর সরাসরি আক্রমণ চালায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে প্রথম থেকেই স্থানীয় রাজাকার ও পাকিস্তানি সৈন্যদের নজর ছিল ইসলাম নগরে অবস্থিত খানকা শরীফের উপর।  ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে এসেছিলেন।২০ মে পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ চালায় ইসলাম নগরে। ইসলামনগরে ঢুকেই তারা শুরু করে তাদের নারকীয় অত্যাচার। তারা গ্রামের অনেক পুরুষদের একটি ফাঁকা মাঠে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে সবাইকে শুয়ে পড়তে বলে এবং গুলি করার জন্য তৈরি হয়। ভাগ্যক্রমে সেখানে একজন মেজর উপস্থিত হয় এবং গুলি করতে নিষেধ করে। এরপর কি মনে করে যেন সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ছেড়ে দেওয়ার আগে সবার নাম ঠিকানা লিখে নেয়। সেখান থেকে যাওয়ার সময় সাথে করে দুইজন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায়। তারা হলেন কোম্পানি সাহেব ও সিরাজুল ইসলাম। 

এই দলের নেতৃত্বদানকারী সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন আফজাল ও ক্যাপ্টেন হারুন-অর রশিদ জানতে চায় গত নির্বাচনে তারা কোন দলকে ভোট দিয়েছেন? উত্তরে প্রাণের মায়ায় ২-১ জন মিথ্যার আশ্রয় নিলেও অধিকাংশই নির্ভয়ে বলেন, তারা আওয়ামী লীগকে অর্থাৎ নৌকায় ভোট দিয়েছেন। কেন তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন, এই প্রশ্নের উত্তরে মহল্লার আলোকিত মানুষ ডা. মোস্তফা আহম্মেদ তার সত্য কারণ ব্যাখ্যা করেন। এরপর পাকিস্তানি সেনা অফিসার একটা তালিকা বের করে কতগুলো নাম পড়ে শোনায়। আগামীকাল সকাল ১০ টার মধ্যে ক্যাম্পে হাজিরা দিতে হবে, নইলে এই মহল্লার সবাইকে মেরে ফেলা হবে বলে শাসিয়ে দেয়। গ্রামের সব মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে এগিয়ে আসেন ৮ জন পুরুষ। সকলের ধারণা ছিল প্রথমে যে দুইজন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তাদের মত এদেরকেও ফেরত আসতে দিবে।পরেরদিন সকালে ৮ জন নিবেদিত প্রাণ মানুষ সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পড়ে তৈরী হয়ে আসেন সবার জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে। সেদিন তাদের বিদায় জানাতে জড়ো হয়ে ছিল শত শত মানুষ। একটা গরুর গাড়ি করে তারা রওনা দেয়।ইপিআর  ক্যাম্পে পৌঁছালে তাদেরকে রেখে দিয়ে পাকিস্তানিরা গাড়িচালক-কে দিয়ে খালি গাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেয়। খালি গাড়ি পেয়ে সবার হৃদয় অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে। তবুও আপন জনের ফেরার অপেক্ষায় তারা আশায় বুক বেঁধে প্রহর গুণতে থাকে। তাঁরপরে তাদের কি হয়েছিল কেউ জানতে পারেনি। স্বজনরা খোঁজ করে জানতে পারেনি তাদের অবস্থা।তিন দিন পর ২৪ মে সবাই একটা আশার কথা শুনতে পান। ওই এলাকার ছোট ছোট ছেলেরা তিন দিন পর একদিন বেলা ১১/১২ টার সময় দেখতে পায়, একটা সেনাবাহিনীর ট্রাকে করে সেই আটজনকে গ্রামের দিকে নিয়ে আসছে। সবাই ভাবল এবার তারা সবাই গ্রামে ফিরে আসবে। কিন্তু তা হলো না। তাদের মধ্যে মো. হাকিম নামে একজনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ০৭ জনকে নিয়ে ট্রাক আবার ফিরে যায় শহরের দিকে। তারপর ট্রাকটি কোথায় গেল তা আর কেউ বলতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে,বাকি সাত জনকেও হয়তো সেদিন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই আনা হয়েছিল । কিন্তু স্থানীয় কারো কারো ইশারায় তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছিল। বাকি ৭ জনকে নিয়ে বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমির পাশে আরও ৮ জনের সাথে তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়। এই ৮ জনের পরিচয় জানা যায়নি। এই ৮ জনকে বালিয়াডাঙ্গী থেকে ধরে আনা হয়েছিল। লাশ মাটি চাপা দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ২ জনকে। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ঠাকুরগাঁও রোডের জুতা সেলাইকারী কারিগর রামচরণ ও অন্যজন আব্দুল হাকিম। ট্রাকের চালক সি এন্ড বি, আজিম উদ্দিনকেও লাশ মাটি চাপা দিতে বাধ্য করা হয়। রামচরণ ও ট্রাক চালক দেশ স্বাধীনের পরে তাদের আত্বীয়-স্বজন এলাকাবাসীকে এই ঘটনা জানান।

ফারজানা হক, শিক্ষক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, [email protected]







সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]