দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের অন্যতম দায়িত্ব গবেষণায় মনোযোগ নেই। দেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ১৫ শতাংশ ২০২২ সালে গবেষণা খাতে কোনো টাকা বরাদ্দ রাখেনি। এর মধ্যে কয়েকটি পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। নতুন কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও গবেষণায় বরাদ্দ রাখেনি। অবশ্য সুপরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় বরাদ্দ রেখেছে, তাদের শিক্ষার মানও ভালো।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেস বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শিখিয়ে পরীক্ষা নিয়ে সনদ তুলে দেওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র কাজ হতে পারে না। গবেষণায় প্রকাশনা প্রভৃতিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ। এসব কাজকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান। শুধু ২০২২ সাল নয়, অনেকদিন ধরেই গবেষণা না করার বিষয়টি আলোচনা হয়ে আসছে। আমরা মনে করি এ ব্যাপারে ইউজিসিকে শাস্তির কথা ভাবতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করার সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ইউজিসি বলেছে শিক্ষা গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মানসম্পন্ন প্রকাশনার কোনো বিকল্প নেই। মানসম্পন্ন প্রকাশনা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষকদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা দেয়াসহ তরুণ গবেষকদের পুরস্কার, পিএইচডি বৃত্তির জন্য অর্থের পরিমাণ বাড়ানোসহ ১৪টি সুপারিশ করেছে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবারের প্রতিবেদনে শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
পাকিস্তান আমলে ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেই দেশে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সময়ের প্রয়োজনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয় সরকার। এটি দরকার ছিল, কিন্তু দিতে দিতে ১৬৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া মনে হয় ঠিক হয়নি। বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা-যোগ্যতা বিবেচনা না করে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ অনুমোদন দেয়া ঠিক হয়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে গেছে, যাদের কাজ হচ্ছে ‘সার্টিফিকেট’ প্রদান করা। দেশের শিক্ষার মান কমে গেছে এবং তা দুঃখজনকভাবে কমে গেছে। শিক্ষার মানে বাংলাদেশে স্কোর করেছে ২ দশমিক ৮, যা ভারত ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে ২০ দশমিক ৬, এমনকি পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ১৫। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েল পাস করে চাকরি মিলছে না। উপমহাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশে যা ৪৫ শতাংশ। অথচ মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাস করছেন তারা চাকরি পেয়েই যাচ্ছেন। এরকম অবস্থা চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় চলতে হলে মান অর্জন করতে হবে, তার জন্য গবেষণা, প্রকাশনা প্রভৃতি থাকতে হবে, তার জন্য যা বরাদ্দ রাখতে হয় হবে।