চট্টগ্রামের বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের স্থল ও সাগর পথে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের আভিযানে ৩০ জন দুর্ধর্ষ ডাকাত ভূমিদস্যকে বিপুল পরিমাণ অগ্নিঅস্ত্র গোলাবারুদ সহ গ্রেফতার করেছে ৷
১১ই ফেব্রুয়ারি ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইংরেজি ৪৮ ঘন্টা এই অভিযান পরিচালনা করা হয় গ্রেফতারকৃতরা হলেন, করিম (৩৩), চট্টগ্রাম জেলা আনোয়ারা থানার দক্ষিণ পূর্বপাড়া এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে । মোঃ রুবেল (৩৩) কক্সবাজার জেলা কুতুবদিয়া থানার ওয়াইজার পাড়া,এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে ৷মোঃ জফুর (৩৫), চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলার গহিরা এলাকার মৃত মেখের আলীর ছেলে ৷
![](https://www.dailybhorerdak.com:443/2024/02/12/BD_1707740851.jpg)
আঃ রহিম (২৫), একেই থানার গোবাদিয়া এলাকার নোয়া মিয়ার ছেলে ৷ মোঃ শামীম (২১), ভোলা জেলা চরফ্যাশন উপজেলার আয়েমাবাগ এলাকার দুলাল বলির ছেলে মোঃ ইউসুফ (২৯), একেই উপজেলার আয়েশাবাগ মৃত আব্দুল মান্নান বলির ছেলে ৷শাজাহান বেগম একেই উপজেলার জিন্নাহ এলাকার মৃত কাঞ্চন মাঝির মেয়ে। মোঃ সাহাব উদ্দিন (৩৫), ভোলা জেলা শষীভূষন উপজেলার শান্তিনগর এলাকার -মোঃ রবি আলমের ছেলের ৷মোঃ শওকত (৩৭), চট্টগ্রাম আর পাড়া থানার সুন্নাহপাড়া এলাকার মৃত নুর মোহাম্মদ'র ছেলে। মোঃ ইসমাইল (২৬), একেই উপজেলার বোয়ালীয়া এলাকার মোঃ আলমগীরের ছেল৷দেলোয়ার ইসলাম (৪২), কক্সবাজার কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর দুরুম এলাকার আবু সৈয়দ, এর ছেলে,নুর মোহাম্মদ (১৭), চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলার ভোটতলী এলাকার-হাসান শরীফের ছেলে, আব্দুর রহিম সিকদার (৩৪), একেই উপজেলার বারখাইন এলাকার আফজাল আহমদ'র ছেলে ৷মোঃ মফিজুর রহমান (৩০), একেই উপজেলার দোয়াশি বাজার এলাকার-মৃত ইয়ার মোহাম্মদ এর ছেলে৷ফজল হক (৪০), একাই উপজেলার - মৃত মোঃ শফি'র ছেলে ৷ মোঃ গিয়াস উদ্দিন (২৬), কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলার -আন্দার ঘোনা এলাকার-বাদশা মিয়া'র ছেলে। মোঃ কাছেদ (১৯), চট্টগ্রাম আনোয়ারা থানা বোয়ালিয়া এলাকার -নুরুল হক'র ছেলে, মোঃ আকিদ খান (৩৭), একেই উপজেলার গোবাদিয়া এলাকার-মৃত হবিবুর রহমান'র ছেলে, মোঃ দিদারুল ইসলাম (৩৩), কক্সবাজার কুতুবদিয়া থানা দক্ষিন দুরুম,এলাকার মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে। মোঃ নাইম (১৯), একেই উপজেলার আকবর সিকদারপাড়া এলাকার -আক্তার হোসেনের ছেলে মোঃ হারুন (৪৪), চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলার দক্ষিন পূর্ব পাড়া এলাকার -আব্দুর সবুরের ছেলে। মোঃ ইয়াছিন(২৯), একেই উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব পাড়ার - মৃত-আব্দুর সবুর এর ছেলে ৷ মোঃ খলিলুর রহমান (২৫), একেই উপজেলার কুর্দ্দ গহিরা এলাকার-আবুল কালম'র ছেলে মোঃ ইকবাল হোসেন এক একেই এলাকার সালেহ আহম্মদ'র ছেলে, মোঃ শাহেদ (২২), একই এলাকার মোঃ রফিক'র ছেলে,মোঃ হোসেন (২৭), একই এলাকার -মৃত ইয়ার মোহাম্মদের ছেলে ৷মোঃ আলী হোসেন (২৪), একই এলাকার -আব্দুস সালামের ছেলে,আব্দুল মান্নান (৪০), একই এলাকার -মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে, মোঃ সোলায়মান (৩৮), একই এলাকার -মৃত আব্দুল রশিদের ছেলে৷
চট্টগ্রাম র্যাব ৭ সিনিয়র সহকারী (মিডিয়া) নুরুল আফছার চৌধুরীর স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান৷
তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে উক্ত তথাকথিত গডফাদারের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন-শৃংখলা বাহিনীর চোঁখ ফাকি দিয়ে নিজেদের ট্রলার নিয়ে অন্য যেকোনো কোম্পানির বোট ডাকাতি করে মাঝিমাল্লাদের বেধড়ক পিটিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নামিয়ে দিয়ে জলদস্যুরা লুটকৃত কোম্পানির বোট দিয়ে ডাকাতি চালিয়ে যায় জলদস্যূরা। যাতে তথাকথিত গডফাদারদের কেউ চিহ্নিত করতে না পারে।
র্যাব-৭, চট্টগ্রামের নিকট অভিযোগ গৃহীত হয় যে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের, ভোলা ও বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যু বাহিনী কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর সম্প্রতি তারা আবারও পূর্বের ন্যায় সাগরে জেলেদের উপর অত্যাচার, জুলুম, চাঁদাবাজি এবং অপহরণসহ সকল প্রকার অন্যায় কাজ পরিচালনা করছে। ভুক্তভোগীদের এরুপ অভিযোগের বিষয়টি র্যাব-৭, চট্টগ্রাম মানবিকতার সহিত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে উল্লেখিত এলাকায় ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১১ ফেব্রয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ থেকে অদ্য ১২ ফেব্রয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের স্থল ও সাগর পথে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের আভিযানিক দল দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখিত আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত সকল আসামীদের জ্ঞাতসারে তাদের নিজ হেফাজতে থাকা ০২ টি ট্রলার থেকে ০৮টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ০৫টি কার্তুজসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমান সরাঞ্জাম উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পুরো এক/দুই সপ্তাহ বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি করে দাপিয়ে বেড়ায়। গডফাদারদের কাজ হলো অস্ত্র, গুলি এবং ট্রলারের যোগান দেয়া। বিভিন্ন নৌ/লঞ্চ/স্টীমার ঘাটে সোর্সের মাধ্যমে আইন শৃংখলা বাহিনী সাগরে অভিযানে যাচ্ছে কিনা তা তদারকি করে জলদস্যুরা উপকূলে আসার সময় তা অবগত করাসহ বোট মালিক এবং মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে ডাকাতির মাছ ও মালামাল বিক্রি করে।
এছাড়াও জলদস্যুরা সাগরে গিয়ে ডাকাতি করে মাছ এবং মালামাল বিক্রয়ের টাকা ৪০% কথিত গডফাদারের, ২০% তেল খরচ এবং বাকী ৪০% ডাকাতি সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত সদস্যদের মাঝে বন্টন করতো। গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে আরোও জানা যায়, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনের ০৩টি সশস্ত্র ডাকাত চক্র (ভোলা, বরিশাল, কুতুবদিয়া এবং আনোয়ারা এলাকায়) একত্রিত হয়ে সাগরে বড় পরিসরে দস্যূতার পরিকল্পনা করছে। উল্লেখিত চক্রটির পরবর্তী ১০-১২ দিনের মধ্যে প্রায় ১৫-২০ টি ট্রলারে ডাকাতি করার পরিকল্পনা ছিল। ডাকাতি শেষে লুটপাটকৃত মাছ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের দিকে নিয়ে বিক্রয় করা হতো। পরবর্তীতে লভ্যাংশ আনোয়ারা-কুতুবদিয়া এলাকার জলদস্যুদের নিকট মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হত। অভিযানের পরিকল্পনা অনুযায়ী র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি চৌকস আভিযানিক দল পতেঙ্গা হতে দক্ষিণ-পশ্চিমে গহীন সমুদ্রে তাদের গতিরোধের চেষ্টা করলে তারা র্যাবকে প্রতিহত করে এবং তাদের দিক পরিবর্তন করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা নৌ-বন্দর এলাকার ১৫নং ঘাটের দিকে আসতে থাকে। এসময় র্যাব সদস্যরা তাদের ২টি ট্রলারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রলার থেকে অস্ত্র ও ডাকাতির মাছ এবং মালামালসহ ৩০ জনকে আটক করে। আসামি শাহেদ মাঝী ছিল প্রথম গ্রুপের দলনেতা সে মূলত কুতুবদিয়া এলাকার অধিবাসি। তার দলের কাজ ছিল ডাকাতি করার জন্য অস্ত্র, বোট, জাল এবং আনুসাঙ্গিক যে সকল সরঞ্জামাদি লাগতো সেগুলো সরবরাহ করা। ধৃত আসামির মধ্যে শাহেদ মাঝীর দলে ০৯ জন ডাকাত সদস্য ছিল।
আসামি ইউসুফ মাঝী ছিল ২য় গ্রুপের ডাকাত নেতা এবং ডাকাতির মূল পরিকল্পণাকারী। সে প্রথমে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিবার্চন করতঃ বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করে ডাকাতির জন্য প্রস্তুত করে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় একত্রিত করত। এরপর ডাকাতির স্থান নির্বাচন করে নিজে সশরীরে হাজির থেকে ডাকাতির কার্যক্রম সম্পন্ন করত ধৃত আসামি ইউসুফ। ধৃত আসামির মধ্যে ইউসুফ মাঝীর দলে ১১ জন ডাকাত সদস্য ছিল। আসামি করিম মাঝী ছিল ৩য় গ্রুপের ডাকাত নেতা। তার কাজ ছিল ডাকাতির পরে লুন্ঠিত যে সকল বোট, মাছ, জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহপূর্বক সুবিধামত বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে উক্ত টাকা গ্রপের সকল সদস্যকে সমানভাবে বন্টন করা। আসামির মধ্যে করিম মাঝীর দলে ১০ জন ডাকাত সদস্য ছিল।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে স্বীকার করে যে, তারা কয়েকটি সংঘবদ্ধ চিহিৃত শীর্ষ জলদস্যূ ও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য এবং বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী এলাকার সংঘবদ্ধ জলদস্যূ ঘটনায় সম্পৃক্ত সক্রিয় সদস্য। এছাড়াও এই দল গুলো দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী থানা এলাকাসহ সাগর পথে বিভিন্ন চ্যানেলে ডাকাতি করে আসছে। উল্লেখ্য যে, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিষয়োক্ত অপরাধের কারনে তাদের প্রত্যেকের নামে অসংখ্য মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামি এবং উদ্ধারকৃত আগ্নেআস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সরঞ্জামাদি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রকিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।