ইমরুল কাওসার ইমন, নেপাল থেকে ফিরে : হিমালয় কন্যা খ্যাত নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদাড় হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বলেন, নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্যাকেটজাত খাবার, পাট, হোমটেক্স পণ্য, ফার্নিচার সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক্স ও গৃহস্থলি পণ্য সামগ্রী, ওষুধ, মোটরসাইকেলসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নেপালের বাজারে বাংলাদেশি গার্মেন্টস্, সিরামিকসহ আরো বেশ কিছু পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, স্থল পথে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন ভারতের ভেতর দিয়ে পণ্য যাতায়াতে ভারত ঝামেলা সৃষ্টি করে। আসলে এই ধারণা একেবারেই ভুল। বাংলাবান্ধায় নেপালের ওয়্যার হাউস আছে। সেখান থেকে সরাসরি কাঠমান্ডুতে পণ্য চলে আসতে পারে। মাঝে ভারতে কোনো চেক করা হয় না।
নেপালে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, এ ছাড়াও আরেকটি ধারণা রয়েছে। অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মনে করেন নেপালের মানুষের মাথাপিছু আয় কম। সুতরাং এখানে ব্যবসা ভালো হবে না। কিন্তু এটিও সঠিক নয়। নেপালিরা সৌখিন জীবনযাপন করেন। তারা ভালো মানের পণ্যকে প্রাধান্য দেয়। নেপালে বাংলাদেশি হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশটি শতভাগ আমদানি নির্ভর। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ পণ্য আসে ভারত থেকে। বাকিটা চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসে। সুতরাং বাংলাদেশি পণ্যের জন্য এখানে বিশাল সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ৭৮টি পণ্য নেপালে বিক্রি হচ্ছে। হাইকমিশনের তথ্যানুযায়ী, গত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য এখানে এসেছে। গত অর্থবছরে এটি চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। এখানে ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, ফার্নিচার, এগ্রো ফুড ভালো চলছে। পাশাপাশি প্লাস্টিক, হোম টেক্সটাইল, নির্মাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
নেপালের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভাবনার ব্যাপারে সদ্য বিদায়ী শিল্পমন্ত্রী এবং ২০১৭ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগড়িষ্ট আসনে বিজয়ী নেপালী কমিউনিস্ট পার্টির নর্বনির্বাচিত সংসদ সদস্য (ভক্তপুর আস) মহেশ বাসনেত বলেন, নেপালের সাথে বাংলাদেশের বণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন বাড়ছে। নেপাল থেকে বাংলাদেশি পণ্য আমদানির জন্য যে সব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো দূর করতে যেন নতুন সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে সে জন্য আলোচনা করা হবে। তিনি আরো বলেন, ভূমিকম্প পরবর্তি নেপাল বির্নিমানের বাংলাদেশের ভূমিকা অভাবনীয়। নেপালীরা বাংলাদেশের মানুষকে কাছের বন্ধু মনে করে। প্রতি বছর উচ্চ শিক্ষার জন্য নেপাল থেকে ৬০০ থেকে ৭০০ শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে।
নেপালের কাঠমান্ডুতে সফররত মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইল জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (মিয়াযাব)-এর সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠকে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস এবং সদ্য বিদায়ী শিল্পমন্ত্রী মহেশ বাসনেত এ কথা বলেন। বৈঠকে মিয়াযাবের উপদেষ্টা উদয় হাকিম, সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার এম শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক দৈনিক ভোরের ডাকের সিনিয়র রিপোর্টার ইমরুল কাওছার ইমনসহ ২১ বাংলাদেশি সাংবাদিক অংশ নেন। অনুষ্ঠানটির পৃষ্টপোষকতা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, রানার গ্রুপ, মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লি., ওয়ালটন, এবং লাইট ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস।