বায়ুদূষণ ও শব্দ দূষণের মাত্রা এতো বেশী মাত্রায় দাঁড়িয়েছে যে ঢাকা শহরে এখন বসবাস করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিন দিন এই দূষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত বায়ুদূষণ ও শব্দ দূষণ বন্ধ করতে না পারলে ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসবে। বায়ু দূষণের শিকার সবচেয়ে বেশী শিশু ও বৃদ্ধ। এর ফলে বৃদ্ধ ও শিশুদের শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর যৌথ উদ্যোগে “বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫: বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করনীয়”-শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন বক্তারা এসব কথা বলা হয়। বাপা’র সভাপতি, অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক, মো. আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় সম্মেলনে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাপা’র সহ-সভাপতি ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর এমেরিটাস অধ্যাপক, ড. এম. ফিরোজ আহমেদ, বাপা’র সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ভ‚গোল ও পরিবেশ বিভাগ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহীদুল ইসলাম, বাপা সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক, হুমায়ুন কবির সুমন প্রমূখ।
মুল প্রবন্ধে ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে অবস্থিত ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত ২০১৬ হতে ২০২৪ সালের অর্থাৎ ঢাকার গত ৯ বছরের বায়ুমান সূচক বা অছও এর তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষনের মাধ্যমে পাওয়া যায় যে, ঢাকায় গত ৯ বছরের ৩১১৪ দিন এর মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩১ দিন (১%) নির্মল বা ভালো বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। তবে এক্ষত্রে ৬২৪ দিন (২০%) মাঝারি বায়ু, ৮৭৮ দিন (২৮%) সংবেদনশীল বায়ু, ৮৫৩ দিন (২৭%) অস্বাস্থ্যকর, ৬৩৫ দিন (২১%) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৯৩ দিন (৩%) দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করেন।
২০২৪ সালের সবচেয়ে ভাল ও সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিনসংখ্যা হল যথাক্রমে ২ ও ৩৫ দিন। বিশ্ব ব্যাংকের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে কমপক্ষে ২৩৬,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) এর গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বায়ু ও সীসা দূষণ সহ বিভিন্ন দূষণ, যা শিশুদের আইকিউ হ্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, মানুষ প্রতিদিন ৩০ কিউবিকি লিটার বায়ু সেবন করে থাকে। এই বায়ুটুকু যদি দূষিত হয় তবে মানব দেহ মারাতœক ক্ষতির শিকার হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আগে দুষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
তিনি বলেন বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ট্রান্সবাউন্ডোরী মুভমেন্ট। বার্ষিক ১৫/২০ মাইক্রোগ্রাম দুষণ মুলত ট্রান্সবাউন্ডোরী মুভমেন্ট এর ফলে হয়ে থাকে। আমাদের আগে নিজের দেশের দূষণ বন্ধ করা জরুরী তার পরে ট্রান্সবাউন্ডোরী মুভমেন্ট এর ফলে দূষণ বন্ধে ভিশন ২০৩০ মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধি সলিড ওয়েস্ট কম্পোজড করে কৃষিতে ব্যবহারের মাধ্যমে দূষণ কমানোর দাবি জানান। গত ১৫ বছরে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ফলে দেশে দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, গত সরকার উন্নয়নের নামে একের পর এক পরিবেশ বিধংসী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সুন্দরবনসহ সমগ্র দেশের পরিবেশ ধংস করেছে।
আমরা চাই বর্তমান অর্ন্তবর্তিকালীন সরকার দেশের উন্নয়নে পরিবেশকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিবে। দেশের সাধারণ মানুষ পরিবেশ রক্ষায় মূখিয়ে আছে কিন্তু সরকারকে সেই ক্ষেত্র তৈরী করে দিতে হবে। এখন দূষণকারিদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।