প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ১:০৮ পিএম (ভিজিটর : ৮৮)

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে চাঞ্চল্যকর ক্লু লেস রাশেদুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। কিলার সেলিম বন্ধুকে গলা কেটে হত্যা করে স্ত্রীর প্রেমিককে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন।আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সেলিম এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রেম ও প্রতিশোধের গল্প প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি)পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরামুল হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।নিহত রাশেদুল ইসলাম (৪০) সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ পৌরসভার উলিপুর মহল্লার মৃত আব্দুল কাদের ওরফে তুফান সরকারের ছেলে।তিনি বর্মানে তাড়াশ পৌর সদরের ওয়াপদা বাঁধ এলাকায় বসবাস করতেন।এবং পেশায় তিনি একজন পিকআপ ভ্যান চালক ছিলেন । গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে তাড়াশ পৌরসভার আসানবাড়ি এলাকার তাড়াশ টু রানিরহাট আঞ্চলিক সড়কের পাশের একটি ধানক্ষেতের জমির আইল থেকে রাশেদুল ইসলামের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।তিনি গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিলেন।এ ঘটনায় নিহতের ভাই তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই ক্লু লেস ওই হত্যা মামলার তদন্তে নামে জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেনের সার্বিক দিকনির্দেশনায় একটি চৌকস টিম তদন্ত শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে রাশেদুল ইসলামের বন্ধু পৌর সভার আসানবাড়ি মহল্লার মৃত সামছুল হোসেনের ছেলে মো. সেলিম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। পরে সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সেলিমের স্ত্রী শেরজা জনৈক আউয়াল নামে এক ব্যক্তির সথে পালিয়ে যান। তালাক না হওয়ায় স্ত্রীকে ফিরে পেতে মরিয়া ছিলেন সেলিম। এ কারণে আউয়ালের প্রতি ক্ষোভ জমতে থাকে তার। পরে স্ত্রী শেরজার ব্যাগে প্রেমিক আউয়ালের একটি মানিব্যাগ, ছবি, সিমের কাগজ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি খুঁজে পান তিনি। সেলিম তখনই পরিকল্পনা করেন, বন্ধু রাশেদুলকে হত্যা করে সেই মানিব্যাগ মরদেহের পাশে রেখে দিলে আউয়ালকে ফাঁসানো যাবে এবং স্ত্রীকে ফিরে পাওয়া যাবে।পরিকল্পনা অনুযায়ী পয়লা বৈশাখের আগে সেলিম একটি মেমোরি কার্ড, ঘুমের ওষুধ ও বাংলা মদ সংগ্রহ করেন। ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাশিদুলকে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে ধানক্ষেতে নিয়ে যান। স্পিডের বোতলে মিশিয়ে দেন ঘুমের ওষুধ, আর ক্লেমনে রাখেন শুধুই মদ। স্পিডের বোতলের মদ খেয়ে রাশেদুল অচেতন হয়ে পড়ে। তাকে সেখানে রেখে দোকান থেকে বিড়ি কিনে এনে বিড়ি খেতে খেতে আসামী সেলিম তার কোমড়ে থাকা ছুরি বের করে ভিকটিম রাশেদুলকে জবাই করে। আসামী সেলিম প্রায়ই এক মিনিট যাবৎ তার গলায় ফেসানি দিয়েছিল এবং মৃত নিশ্চিত করে ছুরি ধুয়ে মরদেহ ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে নিজ বাড়ীতে চলে যায় তিনি।পরে পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, ঘুমের ওষুধযুক্ত স্পিডের বোতল, ক্লেমনের বোতল, মানিব্যাগ, রাশিদুলের মোবাইল ও একটি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করে।সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরামুল হোসাইন বলেন, বন্ধু রাশেদুলকে হত্যা করে স্ত্রীর প্রেমিক আউয়ালের পরিচয় শনাক্তের কিছু জিনিস লাশের পাশে রাখেদেন সেলিম। যেন সবাই সন্দেহ করে আউয়াল হত্যা করেছে। আউয়াল ফেঁসে গেলে সেলিম আবার তার স্ত্রীকে ফিরে পেত।