ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার হাওরের চরাঞ্চল এবং যেখানে পানির স্বল্পতায় ধান আবাদ কঠিন কয়েক বছর ধরে এসব জায়গায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। ভুট্টায় উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। বন্যা কিংবা খরার ভয় নেই। এবারও ফলন হয়েছে বাম্পার। গত কয়েক বছরে শীতকালের শুরুতে ঝড় বা বৃষ্টিতে রবি শস্যে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিরাপদ ফসল হিসেবে এবছর ভূট্টা আবাদ বৃদ্ধি করেছে কৃষক। যখন থেকে দেশের পোল্ট্রি ও ফিড মিল খাতে ভুট্টার চাহিদা বাড়ে; তখন তাদের চোখে জ্বলে ওঠে নতুন সম্ভাবনার আলো। তারা ধান ছেড়ে আগলে ধরেন ভুট্টা চাষকে। উপজেলা কৃষি অফিস জানায় গত বছর ভুুূট্টা আবাদ হয়েছিল ১২৫ হেক্টর, এই বছর শীতকালীন ভূট্টা আবাদা হয়েছে ১৬২ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ৩৭ হেক্টর বেশি।
উপজেলার জিনদপুর, ইব্রাহিমপুর, কাইতলা দক্ষিন, শ্রীরামপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ভূট্টা আবাদ হচ্ছে। এই উপজেলার কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে সোনালি ফসল ভুট্টা। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার সব ইউনিয়নে ভুট্টার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। চাষিরা ভুট্টা সংগ্রহে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠেই চলছে ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ। কৃষকেরা বলছেন, এ বছর ভুট্টার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে কাঁচা ভুট্টার দাম নিযয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, কাঁচা ভুট্টার দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।
পৌরসভার দোলা বাড়ির কৃষক নাসির মিয়া বলেন, ‘কাঁচা ভুট্টার দাম কম। প্রতি মণ কাঁচা ভুট্টা ৮০০ থেকে ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো। দুই-তিন দিন রোদে শুকানোর পরে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।'জিনদপুর ইউনিয়নের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সেচের পানির অভাবে আমাদের এই মাঠে ধান চাষে ঝুঁকি থাকলেও ভুট্টা চাষে তেমন ঝুঁকি নেই। কারণ ভূট্টায় পানি তত লাগে না তাছাড়া সাথী ফসল হিসেবে আমরা ভুট্টার ফলন ঘরে তুলতে তুলতে লালশাক, পালংশাক আবাদ করতে পারি।
এ ছাড়া ভুট্টা চাষে ধান চাষের চেয়ে খরচ কম হয় কিন্তু লাভ বেশি হয়।’কৃষক আহসানুল্লাহ বলেন, ‘জমিগুলো উঁচু, এগুলো পতিত থাকতো। এখানে ভুট্টা চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। যদি দরদাম ঠিক থাকে, তাহলে লাভবান হবো। কৃষি অফিস থেকেও আমরা ভুট্টা চাষে সার, বীজ, প্রশিক্ষণ এবং নানা ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি।’ফতেহপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘ভুট্টা চাষে আমাদের চার ভাবে লাভ হয়। ভুট্টা বিক্রি করা, কাঁচা পাতা গবাদিপশুকে খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো, সাথী ফসল হিসেবে শাক শুরুর দিকে আবাদ করা যায় এবং গাছ শুকিয়ে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, ‘তুলনামূলক নিরাপদ ফসল হিসেবেই ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। সেচের সমস্যা, অতিবৃষ্টি এবং অনাবৃষ্টি কিংবা আগাম বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন জমিতে ভুট্টা চাষ করলে কৃষক কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত— থেকে রক্ষা পায়।
তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ এই অঞ্চলে ফিড মিল গুলোর চাহিদা ভূট্টার দিকে। আমরা যে সকল জমিতে ধান আবাদ করা চ্যালেঞ্জ কেবল সেখানে ভূট্টা আবাদ করতে পরামর্শ দেই'।
তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতি কেজি শুকনা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩৪ টাকা। সেই হিসেবে প্রতি মন ভুট্টা কেনাবেচা হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। ভুট্টা চাষে কৃষকদের নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তিগত পরামর্শ, বীজ নির্বাচন, সার ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে রোগবালাই দমন পর্যন্ত পাশে আছে উপসহকারী কৃষি অফিসারবৃন্দ।’ উল্লেখ্য যে, এক বিঘা জমিতে ভূট্টার ফলন ৩৫ থেকে ৪০ মণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাজার দর সঠিক থাকলে ব্যয় মিটিয়ে কৃষক বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারে। নবীনগর উপজেলায় উন্নত জাতের ভূট্টার মধ্যে ডিক্লাব, ধামাকা, আলাস্কা, কাবেরি, ইউরেকা, সান ২২২, ডন, লাকী-৭ সহ ইত্যাদি আবাদ হয়ে থাকে।