এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারন নিয়ে এবার কাছাকাছি অবস্থানে গেছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী । বিএনপি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায়। আর জামায়াত চায় আগামী রমজান মাসের মধ্যেই হোক জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
রমজান মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে, তা আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ বা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার কথা। সেই হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রায় অভিন্ন দাবি করেছে বিএনপি ও জামায়াত।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের যে কোনো সময় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে চলতি বছরের জুলাই মাসে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ জানতে অর্ন্তবর্তীকালান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বুধবার যমুনায় অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দীন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সালাহ উদ্দিন আহমদ ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষ করে দুপুর ২টার দিকে যমুনা থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চান । প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় তার সুনির্দিষ্ট ডেটলাইন আমাদের দেননি।
তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে তিনি নির্বাচন শেষ করতে চান। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় আপনারা সন্তুষ্ট কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই।
আমরা পরিষ্কার করে বলেছি আমরা ডিসেম্বরের যে কাট আউট টাইম, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন যদি না হয় দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি সেটা আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
এছাড়া দেশের আরেক প্রধান রাজনৈতিক দল জামায়াত বলছে, জুন মাসে বর্ষা, ঝড়ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, তখন নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। তাই আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন চায় দলটি। আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসভবনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াতের আমির।
বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠক শেষে জামায়াতের আমির সাংবাদিকদের বলেন, তারা জানতে চেয়েছে আমরা কখন নির্বাচনটা চাচ্ছি। আমরা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দিতে চেয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কমিটমেন্ট ঠিক আছে কি না দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, ঝড়ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে। তখন ইলেকশন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। আমরা চাচ্ছি, ওই আশঙ্কার আগেই রমজানের আগে নির্বাচনটা হয়ে যাক। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ত্রয়োদশজাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে আগামী জুলাই মাসে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। আজ আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে যেসব তরুণদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে বিদ্যমান আইন দিয়ে হবে না। এজন্য আইন পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে।
এমন উদ্যোগ প্রথমবারের মতো নেওয়া হচ্ছে। এদিকে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমরা অকারণে এক মাস, দুই মাস বেশি থাকলাম, মোটেও এমনটা নয়। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন হবে। আজ দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা জানান।