ভারতের অনুরোধে বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার হয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ী মেহুল চোকসি। ২০১৮ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া চোকসিকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সোমবার বিবিসিকে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী বিজয় আগরওয়াল।
এই হীরার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভারতের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB)-এর কাছ থেকে প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা) জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।
মেহুল চোকসি এই মামলার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁরা গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং ভারতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধেও আইনি লড়াই চালাবেন।
বিজয় আগরওয়াল বলেন, 'আমরা স্পষ্টভাবে এই মর্মে যুক্তি উপস্থাপন করব যে, তিনি পালানোর ঝুঁকিতে নেই এবং তিনি গুরুতর অসুস্থ। বর্তমানে তিনি ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রত্যর্পণের বিরোধিতা করব এই ভিত্তিতে যে, তাঁর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ নেই এবং এই প্রত্যর্পণ অনুগ্রহভাজনভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভারতে একটি ন্যায়সঙ্গত বিচার পাওয়াও প্রশ্নবিদ্ধ।
বিবিসি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক অপরাধ দমন সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর কাছে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করেছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ ও ২০২১ সালে ভারতের একটি আদালত মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে দুটি জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করেছিল। তবে এখন গ্রেপ্তারি কার্যকর হওয়ার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
মেহুল চোকসি ও তাঁর ভাগ্নে নিরব মোদির বিরুদ্ধে ১.৮ বিলিয়ন ডলারের পিএনবি জালিয়াতি মামলায় ভারতের কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে।
নিরব মোদি, তিনি ২০১৮ সাল থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন, বর্তমানে লন্ডনের একটি কারাগারে রয়েছেন এবং তাঁরও ভারতে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, চোকসি ও মোদি দুজনই ভারতের হাই-প্রোফাইল হীরার ব্যবসায়ী ছিলেন। নিরব মোদির গয়না বিশ্বের বহু হলিউড তারকারা পরিধান করেছেন—এর মধ্যে নাওমি ওয়াটস ও কেট উইন্সলেট অন্যতম। বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ছিলেন তাঁর কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
অন্যদিকে, মেহুল চোকসি ছিলেন গীতাঞ্জলি জেমস-এর মালিক—এক সময়ে ভারতে যার প্রায় ৪,০০০ শোরুম ছিল।
ইডি অভিযোগ করেছে, চোকসি ও মোদি মুম্বাইয়ের PNB-এর ব্র্যাডি হাউস শাখার কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে মিলে ভুয়া ক্রেডিট সুবিধা নিয়ে বিদেশি সরবরাহকারীদের কাছে অর্থ পাঠানোর নামে প্রতারণা করেছেন। এই অর্থ পরে বিদেশে পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ।
তবে মেহুল চোকসি ও নিরব মোদি দুজনই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ভারত ছাড়ার পর চোকসি কথিত যুক্তরাষ্ট্র হয়ে অ্যান্টিগুয়া যান এবং সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ২০২১ সালে তাঁকে ডমিনিকায় আটক করা হয় এবং পরে অ্যান্টিগুয়ায় ফেরত পাঠানো হয়।
২০১৬ সালে এই জালিয়াতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে প্রথম সতর্ককারী বেঙ্গালুরুর উদ্যোক্তা হরিপ্রসাদ এস ভি এই গ্রেপ্তারকে “চমৎকার খবর” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি এএনআই-কে বলেন, 'তাঁকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি যে কোটি কোটি ডলার লুট করেছিলেন, সেগুলো যেন ভারতের কাছে ফেরত আনা যায়।