সম্ভাব্য নাম বিপ্লবী পার্টি, জনতা পার্টি, ছাত্র জনতা আন্দোলন, জাস্টিস পার্টি, ইনসাফ পার্টি

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য টানা ১৫ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে বিএনপি- জামায়াত সহ আওয়ামী বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কিন্তু ছুড়ান্ত সফলতা আছে গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কারের দাবীতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এই আন্দোলনে ব্যাপক হত্যাকান্ডের পরিপ্রেক্ষিত কোটা সংস্কার আন্দোলন রুপ নেয় শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনে । মাত্র কয়েকদিনের তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগষ্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। যদিও এই আন্দোলনে শরীক হয় বিএনপি-জামায়াত সহ দেশের আওয়ামী বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সামাািজক পেশাজীবী সংগঠন ও দেশের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ। যে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়, সে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারী আত্নপ্রকাশ ঘটছে নতুন রাজনৈতিক দলের। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বা সংসদ ভবনের সামনের সড়কে ব্যাপক শোডাউনের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলটির আত্নপ্রকাশ ঘটাতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আত্নপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক ছাত্র-জনতার অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের।
এই ব্যাপারে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমাদের আয়োজন কেমন হবে সেটির ওপর নির্ভর করছে কোথা থেকে ঘোষণা হবে। এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার ও মানিক মিয়া এভিনিউই আমাদের চিন্তায় আছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই আত্ন প্রকাশ ঘটছে এই রাজনৈতিক দলটির। দলটির নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও আলোচনায় রয়েছে, বিপ্লবী পার্টি', জনতা পার্টি, ছাত্র জনতা আন্দোলন, জাস্টিস পার্টি, ইনসাফ পার্টির নাম। এই ব্যাপারে নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, নামের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দলের নাম হিসেবে যে সব মতামত আসছে, তার মধ্যে বেশি আলোচনায় রয়েছে, বিপ্লবী পার্টি, জনতা পার্টিও ছাত্র জনতা আন্দোলনের নাম।
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে দলটির। এর মধ্যে অন্তত ১০০ টি আসনে জয়লাভ করার টার্গেট থাকবে ২৬ ফেব্রুয়ারী আত্নপ্রকাশ হতে যাওয়া ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দলটির শীর্ষ নেতাদের।
এদিকে নাম নির্ধারন না হওয়া এই রাজনৈতিক দলটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন সহ সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে । বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি সহ দেশের ছোট বড় সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা এই রাজনৈতিক দল নিয়ে আলোচনা করছেন। টেলিভিশনের টক-শো সহ দেশের প্রায় সকল গণমাধ্যমে আসন্ন এই রাজনৈতিক দলটি নিয়ে সংবাদ প্রচার হচ্ছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশী গণমাধ্যমে ছাত্রদের রাজনৈতিক দলটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।
ছাত্র জনতার এই রাজনৈতিক দলটিতে শুধু ছাত্র বা তরুনরা নয়, যোগ দিচ্ছেন অসংখ্য সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এছাড়া ক্লিন ইমেজধারী বিভিন্ন শ্রেনী পেশার প্রতিনিধিরাও যোগ দিচ্ছে এই রাজনৈতিক দলে।
দলটির নেতৃত্বে কারা আসবে এই নিয়ে গত কয়েকদিন দফায় দফায় সভা করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে বর্তমান সরকারের তথ্য উপদেষ্টা দলটির আহবায়ক হিসেবে নিতে পারেন। এই জন্য তিনি আজ কালের মধ্যে উদদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। এছাড়া সদস্য সচিব পদে আসতে পারেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এছাড়া নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সারজিস আলম , হাসনাত আব্দুল্লাহ, আহসান জুনায়েদ, সামান্তা শারমিন ,আরিফুল ইসলাম আদীব, আব্দুল হান্নান মাসউদ ও দলটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন, তা অনেকটা নিশ্চিত। তবে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দলের নেতৃত্বে কারা থাকবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতারাই নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদগুলোতে আসছেন, এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
এদিকে দলের আত্নপ্রকাশের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে আমরা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে পারবো। এবং বড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলের আত্নপ্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে শৃঙ্খলা, গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র প্রণয়নসহ বিভিন্ন কমিটি করা হয়েছে। কয়েকটি সভায় আত্মপ্রকাশের সময়, আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের ধরন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।