প্রকাশ: শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০:৪৮ এএম (ভিজিটর : ৩১)
দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে দেশের বড় রাজণৈতিক দল বিএনপি চলতি বছরের জুলাই- আগষ্টের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশও চলতি বছরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায়। অপরদিকে রাজণৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিদেশী পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বাংলাদেশে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চায়। ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি স্পষ্ট কলে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দুই দেশই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে চায়। এ ছাড়া চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত আয়োজন ইস্যুতে তৎপর হয়ে উঠেছে দেশী-বিদেশী শক্তি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউআইওএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দুই দেশই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে চায় এবং তা বাংলাদেশকে তার নতুন অধ্যায় শুরু করতে সহায়তা করতে পারে। বৃহস্পতিবার ডব্লিউআইওএনের অনলাইন সংস্করণে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। বৈশ্বিক অঙ্গনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে এরিক গারসেটি বলেন, এটা অতীতের কোনো বিষয় নয়। বর্তমানে তারা যেভাবে একসঙ্গে কাজ করছে, এর আগে কখনোই এমনটি ঘটেনি। এরিক গারসেটি বলেন, আমি মনে করি, আমরা দুই দেশই একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চাই। এই নীতিতে একমত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে দুই দেশ সমন্বয় করছে বলেও উল্লেখ করেন এরিস গারসেটি। এর আগে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল দ্বিবেদী বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদার বলে অভিহিত করে বলেছিলেন বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও স্বাভাবিক হবে। এছাড়া দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ১৩ জানুয়ারি ভারতীয় সেনা দিবসের আগে আয়োজিত বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
৫ জানুয়ারি ভারতে আসেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। সফরের সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কি অলোচনা হয়েছে কোনো পক্ষ থেকেই প্রথমে মুখ খুলেনি। কিন্তু জ্যাক সুলিভান নিজ দেশে ফিরে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার সময় বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। এছাড়া ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটিও বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ভারতে সফরকালে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সরাসরি মুখ খুলেনি।
এদিকে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। দলটি এ নিয়ে উদ্যোগ নিতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি দলের পক্ষ থেতে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এই আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বার বার বলছি যে নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটি গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা সরকারকে আহ্বান জানাতে চাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকেও আহ্বান জানাচ্ছি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ বছরের মাঝামাঝি সময়েই মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এদিকে নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে বিএনপিসহ অংশীজনদের কী অবস্থান, তা জানতে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার গত রবিবার বিএনপি ও অন্য দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। একই সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত গত সোমবার বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিএনপির সুরে কথা বলেছে জামায়াতও। দলটির মতে, নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন তা দুই থেকে তিন মাসের মধ্য করা সম্ভব। সংস্কার শেষে এ বছরের মাঝামাঝিতে নির্বাচন দেয়া উচিত বলে মনে করেন দলটি শীর্ষ নেতা নায়েবে আমির ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি একটি গণমাধ্যমকে দেয়া স্বাক্ষাতকারে বলেছেন, এই ধরণের সংস্কারের আগে ঐক্যমত তৈরি করার জন্য দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সম্ভব। বিএনপির পক্ষ থেকেও বক্তব্য কিন্তু প্রায় একই রকম। তারাও বলছে, কথিপয় সংস্কার প্রয়োজন এবং সংস্কার শেষ করে নির্বাচন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমি কোনো মৌলিক র্পাথক্য দেখি না।