অস্ত্র আইনের মামলায় ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় মতিউরের স্ত্রী ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তার রিমান্ড বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী রোববার (১৯ জানুয়ারি) দিন ঠিক করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, লায়লার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা রয়েছে। সে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক ইসমাইল সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। পরবর্তীতে আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি লায়লা কানিজ (৫৭) দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করে। এছাড়াও অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ১০৬ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করে। এছাড়াও মো. মতিউর রহমান তার প্রথম স্ত্রী জনাব লায়লা কানিজকে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ১০৯ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের সহযোগিতা করে লায়লা কানিজ (৫৭) ও মোঃ মতিউর রহমান (৫৮) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭ (১) ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মতিউরকে আদালতে উপস্থিত করে অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে আসামির রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তিনদিনের রিমান্ড দেন আদালত।
এর আগে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকা থেকে অস্ত্রসহ মতিউরকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। এসময় গ্রেফতার করা হয় তার স্ত্রী লায়লা কানিজকেও। বুধবার সকালে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
মতিউরের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, মতিউর রহমানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার হেফাজতে একটি অস্ত্র রয়েছে বলে জানান। পরবর্তীতে তার বাসার শয়নকক্ষের আলমারি থেকে নিজ হাতে অস্ত্র এবং গুলি বের করে দেন মতিউর। অস্ত্রটি একটি বিদেশি শর্টগান। আসামিকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামি উক্ত অস্ত্রের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২১ সালে শেষ হয়ে গেছে বলে জানান। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তা কেন নিজের হেফাজতে রেখেছেন তার সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
আসামি জানান যে, তিনি ২৫ রাউন্ড গুলিসহ অস্ত্রটি ক্রয় করেছেন। আলামত জব্দকালে ২৪ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। বাকি এক রাউন্ড গুলি তিনি কি করেছেন তারও কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। আসামি অবৈধভাবে লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রেখে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ও ১৯ (এফ) ধারায় অপরাধ করেছেন।
গত বছর কোরবানির জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। ছাগল কিনতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইফাত। ধানমন্ডির বাসায় ঈদের দিন ছাগলটি কোরবানি দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। তখন ছাগলসহ ইফাতের ছবি জুড়ে দিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন, ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কেনার অর্থের উৎস কী?
এ প্রশ্ন ঘিরে সামনে আসতে থাকে ইফাতের পরিচয়। ইফাত নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে ও সংবাদমাধ্যমে বাবার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান। আরও জানা যায়, তার মা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকি।
ইফাতের বাবার পরিচয় ধরে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের বিপুল ব্যয়ে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য হল কী করে? এরই মধ্যে সামনে আসতে শুরু করে মতিউর পরিবারের সম্পত্তির তথ্য। বিতর্কের মধ্যে মতিউরকে এনবিআরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাদ পড়েন সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ থেকেও। গেল বছর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে থাকা বিপুল সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত।