প্রকাশ: সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:১৮ পিএম (ভিজিটর : ৯৫)
বাংলাদেশের শিল্প খাত বর্তমানে চাপে আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। শিল্প খাতে এই দুরাবস্থার মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্প খাত অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে। তবে আশার কথা হচ্ছে পেট্রোবাংলার প্রস্তাব চূড়ান্ত কিছু নয়। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বসির উদ্দিন বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের ব্যবসা ছেড়েছি, আপনাদের ব্যবসা দেখব বলে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা বিগত সরকারের আমলের মতো করা হয়নি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন শুনানির মাধ্যমে এটা চূড়ান্ত করবে।’ গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের নৈরাজ্য ও সাগরচুরির খেসারত দিতে হচ্ছে মানুষ। না হয় অর্থনীতি আরও খাদে পড়বে। উপদষ্টোর কথায় যেমন আশার দিক আছে তেমনি নিরাশারও দিক আছে। আশার দিক হচ্ছে, পেট্রোবাংলা যে প্রস্তাব করেছে তা চূড়ান্ত নয়। অতীতে যেমন গণশুনানি হতো সেরকম শুনানি করে বিইআরসি গ্যাসের দাম চূড়ান্ত করবে। অন্যদিকে হতাশার কথা হচ্ছে গ্যাসের দাম বাড়ছেই, তা কম হোক বেশি হোক। তবে আশা করব আকাশ-পাতাল দাম বৃদ্ধি নয়। দু’পাঁচ শতাংশ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হোক, যাতে শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি না হয়।
ঢাকায় এক বাণিজ্যিক শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় বিজিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশে ৪৭ বিলিয়ন পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ কোভিড-১৯ এর সময় যখন ওষুধ ছাড়া সব পণ্যের আমদানি বন্ধ হয়ে যায় তখন রপ্তানি পণ্যের শতভাগ এক্সসেসরিজ ও প্যাকেজিংয়ের জোগান দিয়েছিল স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এই খাতের বৈশ্বিক চাহিদা ৭৫০ বিলিয়ন ডলার। এই বাজার ধরতে পারলে প্রণোদনা পেলে রপ্তানি আরও বাড়বে। সুতরাং এ খাতের ভ্যাট ট্যাক্স গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এক সময় সম্পূর্ণ কৃষি-নির্ভর ছিল। এখনো আছে, তবে স্বাধীনতা উত্তরকালের মতো এখন আর নেই। স্বাধীনতা উত্তরকালে জিডিপির প্রায় পুরোটাই আসত কৃষি থেকে। যা এখন ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। শিল্প খাতের অবদান ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ। সেবা খাতের অবদান ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ শিল্প ও সেবা মিলিয়ে কৃষির ওপরে। বাংলাদেশ শিল্পে কখনো ভালো করতে পারবে তা এক সময় ভাবাই যেত না। এখন বিশ্বের দেড়শতাধিক রাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হয়। এর অন্যতম কারণ এখানে গ্যাসের প্রাপ্তি ও শস্তা শ্রম। শ্রমমূল্য স্ফীতির কারণে আগেই বেড়ে গেছে, এখন যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় তাও দেড়শ শতাংশ সেটা বাংলাদেশের শিল্প বাণিজ্যে বিরাট বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। সরকার সেরকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।