কোনো একক মাস হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪ বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে। যার পরিমাণ ২৬৪ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে এসেছিল ২৬০ কোটি ডলার, সেটাই ছিল এত দিন এক মাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। আরো ৪ কোটি ডলার বেশি আসায় ডিসেম্বরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের মাস হল। শুধু ডিসেম্বর নয় বছরের হিসেবেও ২০২৪ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয়ের বছর হয়েছে, ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার এসেছে ২০২৪-এ। এর আগে ২০২৩-এ এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। সে হিসেবে ৪৯৭ কোটি ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ২০২৪-এ। যা ২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে বলা যায় রেমিট্যান্স প্রবাহে যে নেতিবাচক ধারা দেখা দিয়েছিল তা কেটে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণেই এবং নতুন সরকারের প্রতি আস্থা ফিরে আসাতে প্রবাসী আয় বেড়েছে। এটা ইতিবাচক। ফলে দেশের রিজার্ভও বাড়ছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি অর্থনীতির আর যেসব খাত পিছিয়ে পড়ে আছে। যেমন পূজিবাজার, বিনিয়োগ বাজার সেগুলোকেও টেনে তুলতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যও উঠতে শুরু করেছে। সেটাও বেগবান করতে হবে।
করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিগত সরকারের সময় ৪৮ বিলিয়ন রিজার্ভের আর ২০ বিলিয়নে নিচে নেমে গেলে (প্রকৃত রিজার্ভ আরো কম) দেশ এক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। মূলত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট ও দেশ থেকে ব্যাপক ভাবে অর্থপাচারের কারণে দেশ ভয়াবহ অর্থ সঙ্কটে পড়ে। শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট নয়, সাবেক সরকার দেশীয় মুদ্রারও সঙ্কটে পড়েছিল। কাগুজে নোট ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে দেশে ভয়াবহ মুল্যস্ফীতি দেখা দেয়। মোটকথা দেশ মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। ছাত্র জনতার অভূতপূর্ব বিপ্লবের মাধ্যমে আরো পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
২০২২-২৩ বছর থেকে দেশে প্রবাসী আয় পাঠানো কমে যায়। এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ডলারের দাম কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রাখা। হয়ত এতে অর্থপাচারকারীদের স্বার্থ ছিল, কম দামে কিনে বিদেশে বেশি হত।
তাছাড়া প্রবাসীরা সাবেক সরকারের প্রতি রুষ্ঠ ছিল। আমিরাতে প্রবাসীরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ডলারের দাম বাজার ভিত্তিক করে তাতে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হয়, তাছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রবাসীদের আস্থা দেখা দেয়। ফলে প্রবাসী আয় বেড়ে গেছে। ফলে রিজার্ভ বেড়েছে। অর্থনীতি স্বস্তির ধারায় ফিরছে। এখন পূঁজিবাজার উন্নয়নে হাত দিতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগের সাথে কর্মসংস্থানের সরাসরি সম্পর্ক। এই খাতে মন্দা চলছে। এটাও ঠিক রাখতে হবে।