প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:২০ পিএম (ভিজিটর : ১৩১)
বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। ২৭ অক্টোবর রোববার ১৪৯ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ কমে ডিএসইএক্স নেমে আসে ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে। ফলে ৪ বছরের বেশি সময় পর ডিএসই ইনডেক্স ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নামল। এর আগে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ডিএসইএক্স সূচক ৪ হাজার ৯৬৩ পয়েন্টে নেমেছিল। এ ঘটনায় ঐদিন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মতিঝিলের রাস্তায় নেমে আসে এবং বাজারে পতন ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য বিএসইসি প্রতি ক্ষোভ জানাতে থাকে। একই অবস্থা চলতে থাকলে পরের দিনও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মতিঝিলের রাস্তায় মানববন্ধন করেন। এরকম প্রতিবাদ আমরা ১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে হতে দেখেছি। ওই দুই বছরই ছিল আওয়ামী লীগের শাসন সময়ে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাচ্ছে। শেয়ারবাজারের লুটেরারা পালিয়েছে। এখন তো এভাবে মার্কেটের পতন হওয়ার কথা নয়। পুঁজিবাজারেরও সংস্কার হওয়া দরকার। তবে যে গেইনট্যাক্স নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সেটা আগে বন্ধ করে বাজারে ইতিবাচক ধারা ফেরান। পরে সংস্কারের কাজে হাত দিতে হবে।
আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় পুঁজিবাজার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুঁজিবাজারের মাধ্যমে জনসাধারণ দেশের শিল্প বাণিজ্যের মালিকানার অংশ পান। উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ ব্যাংক থেকে টাকা নিলে সেই তহবিল সুদসহ পরিশোধের একটা চাপ থাকে। কিন্তু পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিলে শুধু মুনাফার একটা অংশ ভিডিন্টে হিসেবে দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। কোনো যৌক্তিক কারণে ব্যবসা মার খেলে তহহবিল ফেরত দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে না। সুতরাং পুঁজিবাজার একটা উদ্যোক্তাবান্ধব অর্থায়ন ব্যবস্থা। কিন্তু বাংলাদেশে সবকিছু যেভাবে নষ্টদের দখলে চলে যায়। পুঁজিবাজারও এক শ্রেণির কারসাজিকারীদের ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
গত ৫ আগস্ট সাবেক সরকারের পতনের পর জানা গিয়েছিল সরকারের লোকেরা ২ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুটে নিয়ে গেছেন। টাকাটা পাচার হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রায়, ফলে দেশের রিজার্ভ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে গেছে। ব্যাংক খাতে লুটপাট হওয়াতে ব্যাংক খাত নাজুক অবস্থায়। কথা ছিল সেই সময় শেয়ারবাজারের পতন ঘটার, কিন্তু তখন ঘটেনি। এখন যখন রেমিট্যান্স, রিজার্ভ, রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে তখন পুঁজিবাজার নিম্নমুখী হয়েছে। অবশ্য বিরাট ভয়ের কিছু নেই। অর্থনীতি যখন ইতিবাচক ধারায় ফিরছে, পুঁজিবাজারও ইতিবাচক হবে। শেয়ার থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর যে গেইনট্যাক্স বসানো হয়েছে, তা প্রত্যাহার করার জন্য এনবিআরের সাথে বেঠক করেছে ডিএসইর কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলেই আশা করা যায় পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এবং সেটা এখন দরকার।