শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরকুমারি ইউনিয়নে পদ্মা মেঘনা বিধৌত মোল্লার হাটে প্রতিদিন বিক্রি হয় অন্তত ৩ কোটি টাকার শুকনো মরিচ।
প্রায় ৭০ বছরের পুরানো এ হাট বসে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার। বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকার মরিচ। প্রমত্ত পদ্মার শাখানদীর তীরে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার চরকুমারিয়া ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র এ হাট ১৯৫৫ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে।
৭০ বছরের পুরানো এ হাটটি এখন জমজমাট শুকনা মরিচ বিক্রিতে। ক্রেতা বিক্রেতাদের মতেএটি দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে মরিচ বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে, এ দুই দিনে অন্তত ছয় থেকে আট কোটি টাকার শুকনো মরিচ কেনাবেচা হয়। মসলা প্রস্তুতকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠান প্রাণ,স্কায়ারের মতো প্রতিষ্ঠিান এখান থেকে শুকনা মরিচ কিনে।
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা, গোসাইরহাট উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পদ্মা ও মেঘনা নদীবেষ্টিত। প্রতিবছর বর্ষার পানিতে পলি জমে চরাঞ্চলের কৃষিজমি উর্বর হয়। তাই এ এলাকাগুলোয় ব্যাপক মরিচ আবাদ করেন কৃষক। চলতি মৌসুমে শরীয়তপুরে ৭হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৪৮০ মেট্টিক টন।
এ অঞ্চলের কৃষক ডিসেম্বর মাস থেকে চরাঞ্চলের জমিতে মরিচের আবাদ শুরু করেন। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত জমি থেকে লাল রঙের পাকা মরিচ তুলে কৃষক। এর পরে রোদে শুকিয়ে শুকনা মরিচ সে মরিচ কৃষক মোল্যার হাটে বিক্রি করতে শুরু করেন। ফেব্রুয়ারী থেকে টানা নভেম্বর পর্যন্ত মোল্যার হাটে মরিচের বেচাকেনা চলে। এ বছর বর্তমানে প্রতি কেজি শুকনা মরচি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মুল্যে।
বিখ্যাত এ হাটের ক্রয় ও বিক্রি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে আসেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্যা। এ সময় তার সাথে শরীয়তপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোস্তফা কামাল হোসেন, ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম ও বাজার সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আর্শিনগর ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা কায়সার আহেম্মেদ রানা বলেন, শুকনা মরিচ বিক্রির হাটকে কেন্দ্র করে মোল্যার হাটে কয়েকটি মসলা ভাঙানোর মিল গড়ে উঠেছে।এখানকার মরিচের মান ভালো। তাই বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা এ হাট থেকে মরিচ কিনে মিলে গুঁড়া করে বাজারজাত করে। এতে এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরকুমারিয়ার কদমতলী এলাকার কৃষক মনির হোসেন বলেন, ৫ বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। আল্লাহ রহমতে অনেক ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে দাম কম থাকরেও ভালো ফলনে আমরা লাভেই আছি।আজ ২শ কেজি মরিচ বিক্রি করে ৫৫ হাজার টাকা পেয়েছি।
মোল্যার হাটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও শুকনা মরিচের আড়তদার জাকির হোসেন মোল্যা বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষক, ক্রেতা ও বিক্রেতারা এখানে আসেন। চাঁদাবাজি ও কোন প্রকার ঝামেলা না থাকায় মানুষ এখানে পণ্য বেচাকেনা করতে নিরাপদ বোধ করেন।শরীয়তপুর জেলা ছাড়াও খুলনা, চাঁদপুর,মুন্সীগঞ্জ ও বরিশালের চরাঞ্চল থেকে এই হাটে মরিচ নিয়ে আসেন কৃষকেরা।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম বলেন, ‘৭০ বছর পূর্বে স্থানীয় মোল্যা পরিবারের মুরব্বিরা এ হাটটি প্রতিষ্ঠা করেন। নদঅ ও সড়ক উভয় পথেই যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষক, ক্রেতা ও বিক্রেতারা এখানে আসেন। চাঁদাবাজি ও অব্যবস্থাপনা না থাকায় কেনা বেচা ভালো হয়।’ এ মচির কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে তিনটি ব্যাংকের শাখা স্থাপন করা হয়েছে।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মরিচ উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। দামও ভালো আছে। উৎপাদনের ভরা মৌসুমে মোল্যার হাটে সপ্তাহে ছয় থেকে আট কোটি টাকার শুকনা মরিচ কেনাবেচা হয়ে থাকে। ওই হাটের মরিচ বিভিন্ন মসলা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিনে নেওয়ায় কৃষকও ন্যায্য মূল্য পায়।