রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তার আবাসনের বেশির ভাগ বাসা-কোয়ার্টার খালি পড়ে আছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাড়া, নিরাপত্তাহীনতা, কক্ষস্বল্পতা এবং অল্প টাকায় বাইরে বেশি সুবিধা পাওয়ায় শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত কোয়ার্টার ছেড়ে বাইরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য মোট বাসা বা কোয়ার্টার আছে ২৮৫ টি। এর মধ্যে ১২৪টি বাসা খালি পড়ে আছে। সহায়ক, সাধারণ ও সুইপারদের ১৫০টি বাসার মধ্যে ৫৬টি খালি। এর মধ্যে সহায়ক শ্রেণিদের জন্য নির্ধারিত ৩৬টি বাসার মধ্যে ১৭টিতে কর্মচারীরা বসবাস করলেও ১৯টি খালি পড়ে আছে। সাধারণ শ্রেণিদের ৫৪টি বাসার মধ্যে ৩৮টিতেই কেউ থাকেন না।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে , বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলো সেকেলে। কিন্তু ভাড়া অনেক বেশি। একই ভাড়ায় বাইরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধাসহ ভালো বাসা পাওয়ায় সেদিকে ঝুঁকছেন তারাঁ।
প্রকৌশল সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত আবাসনের ভাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদমর্যাদা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। একই বাসার জন্য কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তাকে দিতে হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা, আবার কাউকে গুনতে হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী প্রভাষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ এবং অধ্যাপক ক্যাটাগরির শিক্ষকদের ৩৫ শতাংশ হিসাবে ভাড়া দিতে হয়। অথচ নগরে তিন-চার কক্ষবিশিষ্ট, লিফটসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ফ্ল্যাটের ভাড়া ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলো খালি পড়ে থাকছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার দেখভাল করে প্রকৌশল দপ্তর। প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোয়ার্টারে থাকলে যে ভাড়া কাটা হয়, সেই টাকা দিয়ে রাজশাহীতে ভালো সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বাসা পাওয়া যায়। এ জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা কোয়ার্টারে থাকতে চান না।
তাছাড়াও তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহজ লভ্যাংশে ঋণদান নিয়ে শিক্ষকরা নিজস্ব বাড়ি করার দিকে ঝুঁকছেন। কোয়ার্টারে যে টাকায় তারা থাকবে সে টাকায় তারা ঋণ পরিশোধ করে এবং চার থেকে পাঁচ বছর পর তাদের নিজস্ব বাড়ি করে ফেলে। এছাড়াও বর্তমানে শিক্ষকদের ছেলেমেয়েদের শহরের দিকে লেখাপড়ার সুবিধাজনক কারণে সবাই শহরের দিকে ঝুঁকছেন । যাতায়াত সুবিধা, নিজস্ব গাড়িসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে থাকতে চাচ্ছেনা বলে ধারণা করেন তিনি।
এবিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য বরাদ্দকৃত আবাসিক কোয়ার্টার গুলোতে যে পরিমাণ ভাড়া বা অর্থ প্রদান করতে হয় তা অনেক বেশি। তার থেকে কম ভাড়ায় বাহিরে এরচেয়ে ভালো বাসা কিংবা মেসে পরিবারসহ থাকা যায় । একজন অধ্যাপকের কোয়ার্টারে থাকলে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয় কিন্তু বাইরে তা অনেক কম । এছাড়াও শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত আবাসিক কোয়ার্টার গুলো নিম্নমানের ও পুরাতন ৷ বাড়িগুলো দেখতে সুন্দর হলেও ভেতরে ততটা আরামদায়কও নয় । এছাড়াও দুজন ছেলে-মেয়ে থাকলে এবং তারা বড় হলে পরবর্তীতে সেই পরিবারে কোন অতিথি আসলে তাদের থাকার পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়া সম্ভব হয় না।
বাসার নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি বাহিরের সাথে তুলনা করি তাহলে বলা যায় মোটামুটি ভালো, খারাপ নয়। কিন্তু কোয়ার্টারগুলোর পিছনের নিরাপত্তা একদমই নেই বললেই চলে। এই সকল কারণে শিক্ষকরা বাহিরে চলে যাচ্ছে ।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত(ঋণ) নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয় তাদের নিজস্ব বাসা বাড়ি তৈরীর জন্য। পরবর্তীতে সেই টাকা কোয়ার্টারে থাকাকালীন যে খরচ হতো সেটার সাথে সমন্বয় করে কেটে নেওয়া হয়। আর সেই টাকা দিয়ে চাকরি থাকা অবস্থায়ই শিক্ষকেরা নিজস্ব বাসা করে ফেলে।
এবিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে রাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, এটা নিয়ে ভাবনার চেয়ে দুর্ভাবনাই বেশি ৷ এই বাসা গুলোতে থাকতে অনেক শিক্ষকরাই আগ্রহী না। তাছাড়া যারা এই বাসাগুলো নিচ্ছে তাদের যে খরচ হচ্ছে সেটাও অনেক বেশি। তারা যে টাকা দিয়ে এখানে থাকতে হয় তা দিয়ে রাজশাহী শহরে ভালো বাসায় থাকা যায়। এছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক থেকে শিক্ষকদের সহজ ও কম হারে ঋণ নেওয়ার ফলে তারা নিজেরাই বাসা করে ফেলছে। এসব অনেক বিষয়েই শিক্ষকরা এসব বাসাগুলোতে থাকতে অনাগ্রহী।
এ বিষয়ে কোনো বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে তিনি বলেন, বাসাগুলো ফাঁকা থাকাতে বিশ্ববিদ্যালয় একটা বৃহৎ অর্থ হারাচ্ছে তা নিয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বসা না হলেও অনানুষ্ঠানিক পরিকল্পনা চলমান রয়েছে।