ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বুধবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার বুধবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




জনদুর্ভোগের নতুন সংযোজন ব্যাটারিচালিত রিকশা
ইয়াহিয়া নয়ন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ১:৪০ পিএম  (ভিজিটর : ৫০)
ব্যাটারিচালিত যান এখন সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। ঈদের ছুটির চার দিনে ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ মানুষ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নগরীর মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছুটে চলার জন্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। একটু সুযোগ পেলেই মহাসড়কে উঠে যাচ্ছে। চলছে নিশ্চিন্তে। কেউ যেনো দেখার নেই। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। বেপরোয়া এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী বাস গিয়ে পড়ছে সড়কের পাশের খাদে। প্রতিদিন মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা পুরোপুরি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। ফলে বিদ্যুৎ অপচয় বাড়বে। শুধু অপচয় নয়, অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। এরা সংঘবদ্ধ, কেউ কিছু বলার সাহস পায়না। মহল্লার ছিঁচকে মাস্তানরা এদের নিয়ন্ত্রণের নামে দু পয়সা কামিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সড়ক-মহাসড়কের বিষফোড়া। এসব যানবাহনের চালকরা কোনো নিয়মকানুন মানেন না। যানবাহনের কাঠামো যে-রকম সে অনুযায়ী গতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই। ফাঁকা রাস্তায় অনেক চালক এমন বেপরোয়াভাবে যানটি চালান যে, রাস্তায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
সবগুলো মহানগরীতে সাধারণ শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, টালি, ঘড়ি ও চশমা মিস্ত্রি এবং দিনমজুররা পেশা পাল্টে অটোরিকশা চালক হয়েছেন। কারণ, আগের পেশায় বেতন কম, অনিশ্চয়তা এবং কাজ ছিল অনিয়মিত। এখন তাদের সেই সংকট কেটে গেছে। এইসব অদক্ষ অটোরিকশা চালকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে শব্দদূষণ ও যানজট।
দিন দিন রাজধানীর মূল সড়কও গ্রাস করে নিচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মহাসড়কের ইঞ্জিন চালিত গণপরিবহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে রীতিমতো। এতে দুর্ভোগের নগরী হয়ে উঠেছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ এ বাহনটি কোনোভাবেই মূল সড়কে চলার যোগ্য নয়। এসব অটোরিকশাকে দ্রুতই নীতিমালার মধ্যে আনতে না পারলে যানজটে পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়বে রাজধানী।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, কোনো পাড়া মহল্লা বা অলিগলির নয়, রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার রিকশায় মোটর আর ব্যাটারি লাগিয়ে বানানো অটোরিকশা। যা রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছে মূল সড়কের ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের সঙ্গে। যদিও এ বাহনটি এখনও কাগজে-কলমে অবৈধ। শুধু গতির ঝড় ছাড়া মূল সড়কের দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে চলার মতো কোনো উপকরণই নেই বাহনটিতে। এতে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা।
২০১০ সালের পর চীন থেকে আমদানি করা ইজিবাইকের অনুকরণে রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি যুক্ত করা শুরু হয়। তবে ঢাকার মূল সড়কে এসব যান প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। ফলে সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়েনি। ২০১১ সালের দিকে ঢাকাবাসী প্রথম এ ধরনের (মোটর ও ব্যাটারিযুক্ত তিন চাকার যান) যান দেখতে পান। রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি যুক্ত করা হয়েছে সম্পূর্ণ স্থানীয় মিস্ত্রিদের দ্বারা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশি কার্যক্রম ঢিলেঢালা হয়ে পড়ার সুযোগে রাজধানীর সব সড়কে চলাচল শুরু করে এই রিকশা। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের আদেশ দেন। এরপর কয়েক দিন ঢাকায় বিক্ষোভ করে ঢাকা অনেকটা অচল করে রাখেন রিকশাচালকেরা।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে। ওই বছর ২৫ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ বা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই বিষয়বস্তুর ওপর এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা দেন। ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের সুযোগ তৈরি হয়।
রাজধানীতে নিবন্ধিত সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার দাম যেখানে ২০ লাখ টাকার বেশি, সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশার খরচ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, সিএনজিচালিত অটোরিকশার দাম ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। নিবন্ধিত হলেই সেটার দাম ২০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দৈনিক জমা হিসেবে পাওয়া যায় ১ হাজার টাকার মতো। বিপরীতে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের দৈনিক জমা পাওয়া যায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
এখন ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার কেন্দ্রের ব্যবসাও লাভজনক। একেক দফা রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা নেওয়া হয়। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিদ্যুৎ সরবরাহ আগে অবৈধ থাকলেও এখন সেটার বৈধতা নিশ্চিত করছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির আওতায় বর্তমানে বৈধ চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা ২ হাজার ১৪৯। ডেসকোর তথ্য অনুযায়ী, তাদের আওতায় বৈধ চার্জিং স্টেশন আছে ২ হাজার ২৬৩টি। প্রতিটি স্টেশনে প্রতিদিন ৩০ থেকে ২০০টি রিকশা চার্জ হয়।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনা, যানজট, দূষণ কমাতে চাইলে ছোট গাড়ি নিরুৎসাহিত করে বড় গাড়ি দিয়ে কম সময়ে বেশি যাত্রী পরিবহনে সক্ষম যানবাহন যুক্ত করতে হবে। তা না হলে যানজট ও দুর্ঘটনাকে স্থায়ী রূপ দেওয়া হবে। শহরকে বসবাস উপযোগী করতে হলে ছোট গাড়ি বাদ দিয়ে বড় গাড়িকে প্রাধান্য দিতে হবে; উৎসাহিত করতে হবে। ছোট গাড়িকে বড় গাড়ির প্রতিযোগী নয়, সহযোগী বানাতে হবে।
এদিকে এই যানকে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, ব্যাটারিচালিত তিন চাকার রিকশাকে বৈধতা দিয়ে এই যানবাহনগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকার মূল সড়কে যাতে চলাচল করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা থাকতে হবে। জেলাগুলোতে মূল সড়কে এই যানগুলো যাতে দাপিয়ে বেড়াতে না পারে, সে জন্য প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করতে হবে।
তথ্যমতে, রাস্তায় ২০ লক্ষাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। খোদ রাজধানীতে আছে প্রায় ২ লাখ। ব্যাটারিচালিত তিন চাকার রিকশার লাইসেন্স বা চলাচলের অনুমতি দেবে সরকার। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেহেতু বর্তমানে সংসদ বহাল নেই, তাই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এই সংশোধনী করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার রিকশাকে ‘সাধারণ যানবাহন’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, এটি হবে গণপরিবহন-সংক্রান্ত একটি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত। যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ট্রান্সপোর্টেশন সম্পর্কে তারা কোনো ধারণা রাখেন কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ আছে।
এমনিতেই দেশে আয়তন অনুযায়ী রাস্তা কম। ছোট গাড়ি চলাচলের স্বীকৃতি দিয়ে রাস্তার জটিলতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ৮০ হাজার প্যাডেলচালিত রিকশার অনুমতি দিলেও বর্তমানে কয়েক লাখ রিকশা রাজধানীতে চলাচল করছে। কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এখন এই রিকশাকে অনুমতি দিয়ে আরেকটি অরাজকতা তৈরির পাঁয়তারা হচ্ছে। এমনিতে ঢাকা দূষিত নগরী ও বসবাস যোগ্যতায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তলানিতে অবস্থান করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা নগরীতে ব্যাটারিচালিত যানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু এ যানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক নীতিমালা মানতে দেখা যাচ্ছে না। প্রধান সড়কগুলোতে এটি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। কারণ এর বেপরোয়া গতি বড় ধরনের দুর্ঘটনা সৃষ্টি করছে। তাই সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে যাতে এ যান চলাচল করতে না পারে, সে জন্য একটু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। চালকদের নীতিমালা অনুসরণ করে এই যানটি চালাতে হবে। সড়কে বিশৃঙ্খলা রোধ করতে হলে এই যানটির নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি।
লেখক : সাংবাদিক।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]