নওগাঁ ও বগুড়ার চারটি উপজেলার মাত্র চার কিলোমিটার জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সামান্য বৃষ্টির পানিতেই কাদামাটিকে একাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জুতা খুলে পায়ে হেঁটে যেতে হয় গন্তব্যে। ঝড় বৃষ্টির আভাসে ঘরবন্দি হওয়ার শঙ্কায় থাকেন লাখো মানুষ। নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের বড় চাঙ্গুইর থেকে চাতরাগাড়ী ভায়া বাঘাদহ ব্রিজ পর্যন্ত চার কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি বছরের পর বছর উন্নয়ন বঞ্চিত।
গত বৃহস্পতিবার ক্ষনিকের বৃষ্টির পরই সড়কে কাদামাটি হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন কৃষক ও শিক্ষার্থীরা। গ্রামের উৎপাদিত ফসল ও পুকুরে চাষ করা মাছ হাট-বাজারে নেওয়ার সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। দেশে কয়েকদফা সরকার পরিবর্তন হলেও প্রত্যন্ত এই জনপদের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। বৃষ্টি হলেই অসুস্থ রোগীকে জরুরি চিকিৎসায় হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় রোগীকে কোলে ও কাঁধে করে কাদামাটির সড়ক পার করতে হয়। গ্রামের উৎপাদিত ফসল ও পুকুরে চাষ করা মাছ হাট-বাজারে নেওয়ার সময় চরম দুর্ভোগে পড়েন অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ। কৃষি ও মাছ চাষ নির্ভর গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের সুযোগে প্রতিশ্রæতির মাধ্যমে ভোট নিয়ে অনেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু কাঁচা সড়কটির খোঁজ রাখেনি কেউ।
তিনজন অটোচালক জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তারা সোনাকানিয়া বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে কাঁচা সড়ক পথে চাপাপুর বাজার যাওয়ার পর বৃষ্টি শুরু হয়। সামান্য বৃষ্টির পানিতে কাঁচা সড়কে কাদামাটির কারণে গুলিয়া বাজার হয়ে ফিরতে হয়েছে। দুপুরে রোদ হওয়ায় সড়কের কিছু অংশ শুকালেও অনেক কষ্টে যাতায়াত করতে হয়। সড়কের উন্নয়ন না করায় বড় কোনো যানবাহন আসে না। প্রতিদিন এই পথে সিএনজি, ইজিবাইক, অটোভ্যান ও মোটরসাইকেল চলাচল করে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, সপ্তাহের বুধবার ও রবিবার বড় পশুরহাট বসে রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর। এছাড়া চাপাপুর বাজার ধান বেচাকেনার বড় মোকাম। পশুরহাটে ও ধানের আড়তে লাখো মানুষের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন বঞ্চনা থেকে মুক্তি চান এলাকাবাসী। নন্দীগ্রাম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরের জনপদ সোনাকানিয়া বাজার থেকে বড় চাঙ্গুইর পর্যন্ত কার্পেটিং সড়ক রয়েছে।
সেখান থেকে চাতরাগাড়ী ভায়া বাঘাদহ ব্রিজ পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কটি কাঁচা। উপজেলার শেষ সীমান্তের এই সড়কের সঙ্গে আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া ও নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার যোগাযোগ রয়েছে। থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের বাঘাদহ, পারঘাটা, ঘুনপাড়া, পারশুন, বিশারপাড়া, আচুয়ারপাড়া, সাড়াদিঘর, বাসলি, আটান, আন্দাসুরা, মির্জাপুর সহ বেশকয়েকটি গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এই যোগাযোগ ব্যবস্থা অবহেলিত।
বিশারপাড়ার আবুল কাশেম বলেন, মাত্র চার কিলোমিটার কাঁচা সড়কে লাখো মানুষের দুর্বলতা। ভোটের সময় এলেই সেই দুর্বলতার সুযোগ নেয় প্রার্থীরা। সড়ক উন্নয়নের দোহাই দিয়ে বারবার ভোটারদের বিশ্বাস অর্জন করে জনপ্রতিনিধি পরিবর্তন হলেও প্রতিশ্রæতির কথা মনে রাখেনি কেউ। আর মাত্র ক’দিন পরই বরাদ্দ আসবে, এ কথা যুগযুগ ধরে ঘুরছে জনপ্রতিনিধির মুখে।
পারশুন এলাকার ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, চাঙ্গুইর থেকে চাতরাগাড়ী-বাঘাদহ চার কিলোমিটার সড়ক দুই জেলার মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নে কেন এত বঞ্চনা, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন স্থানীয় লোকজন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী আবু তালিম হোসেন জানান, সড়কটির উন্নয়নের জন্য যথাযথ দপ্তর পদক্ষেপ নিচ্ছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে সড়কের উন্নয়ন হবে।