যুক্তরাষ্ট্রে নজিরবিহীন এক পদক্ষেপে ৬ হাজারেও এর বেশি অভিবাসীকে 'মৃত' হিসেবে চিহ্নিত করেছে সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসএসএ) বা সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসন, যাতে তারা নিজ ইচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে।
এমনটাই জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। কিন্তু এখন এইসব জীবিত মানুষদের কেউ কেউ নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ওয়ার্ক পারমিট এবং অন্যান্য কাগজপত্র হাতে নিয়ে এসএসএ অফিসে হাজির হচ্ছেন। ফলে সংস্থাকে বাধ্য হয়ে তাদের নাম পুনঃস্থাপন করতে হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, গত এক সপ্তাহে অন্তত ৩০ জনকে এসএসএ-র 'ডেথ মাস্টার ফাইল' থেকে সরানো হয়েছে।
এই উদ্যোগটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে শুরু হয়, যা ট্রাম্প প্রশাসন এবং এলন মাস্ক-এর 'ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি' দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল। শুরু থেকেই এতে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এসএসএ কর্মকর্তারাও বলেন, এটি গোপনীয়তা আইনের লঙ্ঘন এবং সরকারি রেকর্ড জাল করার শামিল। হোয়াইট হাউজ দাবি করে, তারা যেসব অভিবাসীকে এই মৃত্যু ফাইলে অন্তর্ভুক্ত করেছে (যার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে), তাদের অনেকের সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বা তারা অপরাধে জড়িত ছিল—তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, একবার যদি কারও সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর বাতিল হয়, তাহলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে: 'আপনি আর আইনি ভাবে চাকরি পেতে পারেন না, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা বা সরকারি সহায়তা গ্রহণ করতে পারবেন না। কিছু স্কুল জেলা এমনকি শিশুদের ভর্তি নিতে অস্বীকার করে যদি তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর না থাকে। যদিও কিছু ব্যাংক স্যোসাল সিকিউরিটি নম্বর ছাড়া অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেয়, কিন্তু এই নম্বর ছাড়া অভিবাসীরা বহু গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন।'
অভিবাসন অধিকারকর্মীরা এই ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপকে বলছেন 'ডিজিটাল হত্যাকাণ্ড', এবং তারা বলেন—যাদের সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর আছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে আইনি অধিকার নিয়ে বসবাস করছেন। এসএসএ-র সাবেক প্রশাসক মার্টিন ও'ম্যালি বলেন, 'পুলিশি রাষ্ট্র এখন এখানে, এই মুহূর্তে।' আর সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিজ-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেভিন ও'কনর বলেন, 'প্রশাসন বলছে, তারা কারও মৃত্যু না ঘটলেও তাকে মৃত ঘোষণা করার অধিকার রাখে—এই সিদ্ধান্তের কোনো নজরদারি কোথায়?'