প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম (ভিজিটর : ৫৮)
বেশ কিছুদিন ধরে শিল্প উদ্যোক্তারা আতঙ্কে ছিলেন, কারণ পেট্রোবাংলা শিল্পে গ্যাসের মূল্য ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এবং পুরোনো যারা অনুমোদিত লোড থেকে বেশি গ্যাস ব্যবহার করেন তাদের ওই অতিরিক্ত গ্যাসের ওপর অতিরিক্ত ৩৩ শতাংশ বা প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বেশি হারে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করেছে। এটা ভালো যে, বিইআরসি প্রেট্রোবাংলার উদ্ভট ব্যয় বৃদ্ধি প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু যে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। এটা বৈষম্যমূলক হয়েছে। কোনো দেশে রাষ্ট্রীয় কোনো পণ্য বা সেবা নাগরিকদের কাছে দুই রকম দামে বিক্রি করতে পারে না। নতুন উদ্যোক্তারা সব সময় চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্যোগী হন। সাধারণত নতুনদের জন্য সুযোগ সুবিধা বেশি থাকে। নতুন উদ্যোক্তারা ট্যাক্স হালিডে পেয়ে থাকেন। সেই বিবেচনায় গ্যাসের দাম বেশি নয়, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কম দামে সরবরাহ করা হলে যৌক্তিক হতো। যা হোক বিষয়টা যৌক্তিক হয়নি, এই মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টা পুনর্বিবেচনা করা হোক।
বিগত সরকার আইন করেছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মূল্য কম বেশি করার ক্ষেত্রে বিইআরসির গণশুনানি হবে না। এমনকি এ ক্ষেত্রে বিইআরসির কোনো ভূমিকা থাকবে না। সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানো হবে এবং এ ব্যাপারে আদালতে কোনো মামলা করা যাবে না। তৎকালীন সরকার নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলে ২০২৩ সালে শিল্পে গ্যাসের দাম ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিল। ওই বর্ধিত হারই বর্তমানে চালু আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে গ্যাস বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেমলস কমালেই এর ভর্তুকি মেটানো সম্ভব, দাম বাড়ানো লাগে না। এ ব্যাপারে ক্যাবের নিজস্ব একটা স্টাডি আছে।
বাংলাদেশে গ্যাস খাতের সঙ্কটের সূচনা বিগত সরকারের সময় দেশে গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের উদ্যোগ কমিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি কিনে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া থেকে। এলএনজির বাজার অস্থির এবং করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দফায় দফায় এলএনজির দাম বেড়েছে। বর্তমানে সরকারের প্রতি ইউনিট এলএনজি কিনতে খরচ হচ্ছে ৭৯ টাকা ৩৪ পয়সা। বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩১ টাকা ৫০ পয়সায়। এই খাতে ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়ানোর পরামর্শ আইএমএফেরও আছে। সেই ক্ষেত্রে এরকম উদ্ভবটভাবে দাম না বাড়িয়ে গড়ে ৫ শতাংশ হারে বাড়ালে ব্যবসায়ীরাও বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হন না, সরকারেরও ভর্তুকিও কমে। যা হোক, বিষয়টা নিয়ে ভাববার আছে এবং পুনর্বিবেচিনার অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করি। তবে যদি না বাড়িয়ে পারা যায় সেটাই সবচে ভালো হয়।