মাত্র ২০ হাজার টাকা পূঁজি নিয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার যুবক মুকুল চন্দ্র রায়। এরপর নিজের মেধা ও শ্রম এবং উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে বর্তমানে মুকুল একজন সফল উদ্যোক্তা। ২৪ বছর বয়সেই মুকুলের এই সফলতার প্রশংসা করছেন সকলেই৷ তাঁর এই সাফল্যে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
তরুণ উদ্যোক্তা মুকুল উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের দুবলিয়া এলাকার বাসিন্দা। ডিগ্রি পড়ুয়া এই যুবক বাণিজ্যিকভাবে কেচো সার উৎপাদন করে এলাকাজুড়েও ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছেন।
শনিবার (১৮ জানুয়ারী) দুপুরে সরেজমিনে স্মার্ট কৃষক মুকুল চন্দ্র রায়ের মুকুল অর্গানিক এগ্রো ফার্ম নামের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সফলতার পেছনের গল্প শোনার চেষ্টা করেছেন প্রতিবেদক।
মুকুল রায় জানান, এক বছর আগে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে স্বল্প পরিসরে বাড়ির উঠানে কেঁচো দিয়ে মাটির বন্ধু ভার্মি কম্পোষ্ট বা জৈব সার তৈরি শুরু করেন মুকুল। প্রথম পর্যায়ে ১২টি রিং চেম্বারে ০৫ কেজি কেঁচো দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন তিনি৷ এই কাজে সহযোগিতা করেন তাঁর মা। সময়ের পরিক্রমায় এখন তাঁর মূলধন প্রায় লক্ষাধিক টাকা। যদিও শুরুর যাত্রা টা মসৃণ ছিলো না। সেসময় কেঁচো সার উৎপাদন হলেও বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। পরবর্তীতে মাঠ দিবস ও অনলাইন মাধ্যমে তার জৈব সারের প্রচারণা করলে নিয়মিত মাটির বন্ধু জৈব সারের চাহিদা বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে মুকুল হয়ে ওঠেন সফল উদ্যোক্তা।
উৎপাদন, প্যাকেজিং ও বাজারজাত প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুকুল জানান, গোবরসহ কয়েকটি উপকরণ পচিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট বা জৈব সার উৎপাদন প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে ৩৫- ৪০ দিন। বর্তমানে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে ছয় টন কেঁচো সার উৎপাদন করে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন মুকুল চন্দ্র রায়। প্রতি কেজি সার বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা কেজি দরে। সেখান থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রি করে প্রতি দেড় মাস অন্তর অন্তর প্রায় ২৫-৩০ টাকা লাভ হয়। যার ফলে মুকুল চন্দ্র রায়ের সংসারে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে মুকুল রায়ের উৎপাদিত এই জৈব সার আশেপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় রপ্তানি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন। পরিবেশবান্ধব, লাভজনক ও ফসল বেশি হওয়ায় সময়ের সাথে কৃষকেরা এ সার উৎপাদনে ও ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছেন। কেঁচো সার উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষকদের ইতিবাচক সাড়াও মিলছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ।
মুকুল অর্গানিক এগ্রো ফার্মের স্বতাধিকারী ও সফল উদ্যোক্তা মুকুল চন্দ্র রায় বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে চাষাবাদের সাথে কেঁচো দিয়ে ২ রিং এর মাধ্যমে ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন শুরু করি। এখন ১২ রিং-এ এই সার উৎপাদন করতেছি। এই জৈব সার বিভিন্ন ফসলে ব্যবহারের জন্য অনেক মানুষ ক্রয় করে নিয়ে যায়। এতে আমার আর্থিক স্বচ্ছলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বৃহৎ পরিসরে করা সম্ভব। এতে যেমন জৈব সারের চাহিদা মিটবে তেমনি অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
গোয়ালডিহি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল রায় বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন ও গুণাগুণ বৃদ্ধি পায় এবং ফসলের রোগবালাই কম হয়। ফলে ফসল চাষের উৎপাদন খরচ কম হয়। এইজন্য জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ইয়াসমিন আক্তার বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করার অন্যতম উপাদান হল ভার্মি কম্পোস্ট সার। এ সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব। ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে কৃষক-কৃষাণীদের ইতিবাচক সাড়াও মিলছে। আগ্রহী কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদানের কথা জানান তিনি।