ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ● ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ৫ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার শনিবার ● ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




সরেনি রাসায়নিক গুদাম-প্লাস্টিকের কারখানা
পুরান ঢাকায় ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছেই
সাইদুল ইসলাম
প্রকাশ: শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০:৪৬ এএম আপডেট: ১৮.০১.২০২৫ ১০:৫০ এএম  (ভিজিটর : ৮৭)

প্রতি বছরই পুরান ঢাকায় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। এর মূল কারণ ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক গুদাম ও প্লাস্টিকের কারখানা। নিমতলী ট্রাজেডির পর চক বাজারে ভয়াবহ আগুনে পুরে বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনায়ও পুরান ঢাকা থেকে এসব কারখানা এখনও সরাতে পারেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ গতকাল শুক্রবার পুরান ঢাকার হাজারীবাগে একটি ট্যানারি গোডাউনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা। প্লাস্টিক, লেদারস দাহ্য বস্তুর কারখানা ছিল ভবনটিতে। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। মূলত অগ্নিদূর্ঘটনা মোকাবেলায় ভবন মালিকরা নিজস্ব কোন ব্যবস্থা না রাখায় আগুন সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে নেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের সুনির্দিষ্ট কোন আইন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাজারীবাগ বাজারে ট্যানারি গোডাউনে লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের তিন ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ভবনটিতে ছিল না ফায়ার সেফটি প্ল্যান। পানির সংকট, ভেতরে দাহ্য বস্তু, ও সরু রাস্তার কারণে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে এতো সময় লাগছে। পুরান ঢাকায় প্রায় এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ১৫ বছর আগে নিমতলী ট্রাজেডিতে ১২৪ জন নিহত হওয়ার পর চকবাজার ট্রাজেডিতে ৬৭ মানুষের প্রাণহানি। এরপর ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডিতে ৭১ জন নিহত। ২০২১ সালে মুসা ম্যানশন ভবনে আগুন লেগে পাঁচজন নিহত। এভাবে পুরান ঢাকায় অবৈধ রাসায়নিকের গুদাম ও প্লাস্টিকের কারখানায় লাগা আগুনে গত ১৫ বছরে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০০ জন। এসব অবৈধ রাসায়নিকের গুদাম সরাতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব থাকায় অবস্থায় শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এ লক্ষে গুদাম স্থানান্তর করতে টঙ্গীতে এবং শ্যামপুরে দুটি অস্থায়ী গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা ‘বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল পার্ক’ প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু দুই একটি রাসায়নিকের গুদাম ও প্লাস্টিকের কারখানা টঙ্গী এবং শ্যামপুরে সরিয়ে নিলেও অধিকাংশই সরানো হয়নি। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করে তোলা না গেলে এ উদ্যোগও ভেস্তে যাবে।
জানা গেছে, গত সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর হতে জরিপ কাজ শুরু করে দক্ষিণ সিটি। সে সময় দক্ষিণ সিটির কর অঞ্চল ৩, ৪ ও ৫ এ অনুসন্ধান চালিয়ে ১ হাজার ৯২৪টি কেমিক্যাল গোডাউনের তথ্য পায়। সে তালিকায় কেমিক্যালের ধরন এবং ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ গুদামের সংখ্যা এবং এসব গুদামে রাখা রাসায়নিক দ্রব্যাদির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি রাসায়নিকের গুদাম ও প্লাস্টিকের কারখানা না সরানোয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। 
জানা গেছে, ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিজস্ব ব্যবস্থা রাখতে রাজউকের সুনির্দিষ্ট কোন আইন নেই। ফলে দূর্ঘটনা মোকাবেলায় নিজস্ব কোন ব্যবস্থা রাখছে না অধিকাংশ ভবন মালিকরা। দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট আইন করা জরুরী বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। না হয় এমন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে অকালে ঝড়বে মানুষের তাজা প্রাণ পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। 
নগর বিশ্লেষকদের মতে, অন্তত ৩০টি ব্যবস্থা রেখে ভবন বা স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। না হয় দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতির বড় ধরনের শিকার হতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থাগুলো হলো : ভবনের অবস্থান, ব্যবহৃত ফ্লোরের আয়তন, ভবনের সাধারণ সিঁড়ির প্রশস্ততা, অগ্নিনির্বাপণ কাজে সিঁড়ির ব্যবস্থা, জরুরি প্রস্থানের সিঁড়ির সংখ্যা ও প্রশস্ততা নির্ধারণ, প্রতি তলায় সেফটি লবির ব্যবস্থা রাখা, জরুরি বহির্গমন পথ মার্কিং ও ভবনের ছাদ টিনশেড কিনা তা যাচাই করা, ছাদে ওঠার সিঁড়ি সংখ্যা ও প্রশস্ততার দিকে নজর রাখা, ছাদের দরজা খোলা ও ভবনের বহির্গমন দরজার ব্যবস্থা রাখা, আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভ ট্যাংক (৫০ হাজার গ্যালন) রাখা, ১০ হাজার গ্যালনের ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক থাকা, বৈদ্যুতিক তারের কনসিল ওয়্যারিং থাকা, বৈদ্যুতিক বোর্ডের প্রধান সুইচ বক্স, সুইচ বক্স জংশন বক্স এবং ডিমান্ড বক্স নিরাপদ অবস্থানে রাখা, প্রতি ফ্লোরে এবং কক্ষে সার্কিটব্রেকার রাখা, সিঁড়িসহ সব পথ বাধামুক্ত রাখা। কিন্তু এসব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সুর্নিষ্ট কোন আইন না থাকায় ভবন মালিকরা ইচ্ছে থাকলে এসব ব্যবস্থা রাখছে। আর ইচ্ছে না হলে রাখছে না।  ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে ভবনের বসবাসকারীরা।
ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের ওপর হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) পরিচালিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নগরীর শতকরা ৮০ ভাগ ভবনের স্যান্ডটাব নেই। ধোয়া নির্নায়ক যন্ত্র বসানো ছাড়াই নির্মিত হয়েছে ৮২ ভাগ ভবন। ৯১ ভাগ ভবনের নেই অগ্নি থেকে উৎপন্ন তাপ নির্নায়ক যন্ত্র। ফায়ার এলার্ম নেই এমন ভবনের সংখ্যা ৬২ ভাগ। কিছু ভবনে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও অধিকাংশ ভবনেই এর উপস্থিতি নেই। প্রতি বছর এগুলো পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না । ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অধিকাংশ ভবনে জরুরি অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছানোর জন্য নেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ভবনগুলোতে নেই তাৎক্ষনিক প্রয়োজনে ব্যবহার করার মত পানি সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা। ফলে এসব ভবনে অগ্নিকান্ডসহ দুর্ঘটনা ঘটলেই সরকার ব্যবস্থাপনার দ্বারস্ত হতে হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পুরান ঢাকার সড়কগুলো খুবই সরু। এতে আমরা চাইলেও দ্রত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি না। আর আগুন লাগা ভবনগুলোতে ফায়ার সেফটি প্ল্যান থাকে না। পাশাপাশি দাহ্য বস্তু, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন জিনিপত্র থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সক্ষমতার পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যার ফলে গতকালের লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় লেগেছে। স্থাপতি ইকবাল হাবিব বলেন, নগরীর কোন ভবনে দুর্ঘটনা ঘটলেই ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এরআগে এ বিষয়ে কারো খবর থাকে না। এ বিষয়ে রাজউকের সুনির্দিষ্ট আইন ও কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থানে থাকলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। বিশেষ করে বিল্ডিংকোড মেনে যেসব ভবন নির্মাণ করা হয় সেসব ভবনের পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ রাখলে এসব সমস্যা এমনিতেই সমাধান হয়ে যাবে। এ বিষয়ে রাজউকে আরো কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি পুরান ঢাকা থেকে দ্রুত এসব কারখানা ও গুদাম সরিয়ে ফেলতে হবে। না হয় এভাবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।####







আরও খবর


সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]