প্রকাশ: শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:০০ পিএম (ভিজিটর : ৬৬)
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফট্যালেন্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘ডিটেটিক ব্রাঞ্চ (ডিবি) সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। অভিযানের সময় অবশ্যই নির্ধারিত পোশাক পরিধান করতে হবে এবং পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। আইনের বাইরে কোনো কাজ হবে না। আইনের বাইরে আমি যদি কোনো আদেশ করি তারা সেটাও যেন ফলো না করেন।’ ৬ জানুয়ারি ঢাকা ডিবি কার্যারয় পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডিবি কার্যালয়ে থাকা ‘আয়না ঘর’ আর থাকবে না। এখানে ‘ভাতের হোটেল’ আর থাকবে না। ডিবির লোকেরা সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের মনে কথা বলেছেন। এই একবিংশ শতকে এসে সাদা পোশাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেয়ে অজ্ঞাত স্থানে আইকে রেখে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করবে সেটা চলতে পারে না। রাজনৈতিক সব দল ক্ষমতায় এসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রবর্তিত ব্যবস্থা রাখবে কি না সেটা তাদের বিষয়, তবে যে সময়টুকু অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে সেটুকুই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যেমন ১/১১’র সরকারের সময়কালকে মানুষ এখনো স্মরণ করে। সেটাই অন্তত হোক।
পৃথিবীতে যুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া দেশের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এ দেশের মানুষ পাকিস্তানি সুশিক্ষিত বাহিনী বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল যেহেতু তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অর্জনের পর দেখা গেল পাক সৈন্যরা যেভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালাত একইভাবে স্বাধীন দেশেও তা চলতে থাকল। তাহলে এত মানুষ যে জীবন দিল তা কেন ছিল? দেশে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে নব্বইদশকে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এক বিরাট আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবিতে। সেই আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাই বাতিল করে দেয়। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়া, রাতের ভোট, ভোটারবিহীন ভোট প্রভৃতি করে দেশে স্বৈরতন্ত্র স্থায়ী করতে চেয়েছিল। সে জন্য পুলিশ বাহিনীর সহায়তা নিতে হয়েছিল। ফলে পুলিশবাহিনী একটা অত্যাচারী বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। আটক-বাণিজ্য, ক্রসফায়ার-বাণিজ্যে তারা উন্মত্ত হয়ে ওঠে।
২০১৬ সালে উচ্চ আদালত পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশনা দিয়েছিল। উচ্চ আদালত বলেছিল অবশ্যই পোশাক পরে গ্রেপ্তার করতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে অভিযুক্তের স্বজনদের সামনে। শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না। কিন্তু তৎকালীন সরকার আদালতের নির্দেশনার তোয়াক্কা করেনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কথায় পুলিশকে নিয়ম মানতে বলা হয়েছে। আমরা আশা করব পুলিশ উপদেষ্টার কথা মান্য করবে। দেশ পুলিশের অনাচারমুক্ত হবে।