একটি সহযোগী জাতীয় দৈনিকে ‘মান্দায় ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। শুধু মান্দায় নয় সারাদেশে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রকাশিত সংবাদের সাথে এক্সকেভেটরে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে সেরকম একটা ফটোও প্রকাশ করা হয়েছে। একেবারে সরেজমিন রিপোর্ট, যা অস্বীকার করার কেউ নেই। এক্সক্সেভেটর ও শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে কেটে ট্রাক্টরচালিত গাড়িতে করে সব মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটাতে। এভাবে মাটি কেটে নেয়ায় আবাদি জমির উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। অবাধে মাটি কাটার ফলে এসব জমি নিচু হচ্ছে। এভাবে ফসলি জমির মাটি কাটা হলে একটা সময় দেশে কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দেবে। ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ হতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে ভাটা ওয়ালারা মাটি পাবে কোথায়? সেই ক্ষেত্রে বিগত সরকারের সময় মাটি পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে সিমেন্ট বালুর তৈরি হলোব্লক ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগ বেশি দূর এগোয়নি। এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণার কাজ নয়। ছয় মাস এক বছরের সময় দিয়ে মাটির তৈরি ইট ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আর কোনো উপায়ে ফসলি জমি রক্ষা করা যাবে না।
সভ্যতার শুরুতে পাকা ঘরবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণে প্রধান উপকরণ ছিল পাথর। এখনো অনেক পাথুরে পাহাড় সমৃদ্ধ এলাকায় গৃহনির্মাণে পাথর ব্যবহার হয়। যেমন নেপালের পাহাড়ি এলাকায়। কিন্তু প্রকৃতিক পাথরের সীমাবদ্ধতা আছে। একটা পর্যায়ে পাথরের বিকল্প হিসেবে মানুষ মাটি পুড়িয়ে ইট বানানো আবিষ্কার করে। ইউরোপে হাজার বছরের পুরোনো ইটের স্থাপনা এখনো টিকে আছে। উপমহাদেশে ৫-৭শ’ বছরের পুরোনো মসজিদ মন্দির টিকে আছে যা ইটের তৈরি। কিন্তু মানুষ যেমন পাথর থেকে পোড়ানো ইটে ঘরবাড়ি বানানোর প্রক্রিয়ায় গেছে, একইভাবে এখন ইট থেকে হলোব্লকে যেতেই হবে।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন পর্বে আছে। গ্রামগঞ্জে মাটির বাড়ি, খড়ের বাড়ি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ছোট ছোট বাড়ি ভেঙে বড় বড় ভবন হচ্ছে। উন্নয়ন হবেই। কিন্তু ফসলি জমি জলাভূমিতে পরিণত করা যাবে না। হলোব্লকের সুবিধা অনেক। ভবন হালকা হয়। দ্রুত গাঁথুনি হয়, সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি মাটি রক্ষাকারী পরিবেশ সহায়ক। সুতরাং ইটভাটায় মাটির বদলে হলোব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করুন।