বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মনির নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর গুলশান থানায় করা মামলায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল সোমবার ইনুকে আদালতে উপস্থিত করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক আবু জাফর বিশ্বাস। অন্যদিকে আসামির রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমান আসামির চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন ইনুর আইনজীবীরা শুনানিতে আদালতকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে হাসানুল হক ইনুকে হয়রানি করার জন্য এ মামলায় আসামি করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এ মামলায় রিমান্ড না দেওয়ার অনুুরোধ করছি, প্রয়োজনে জেলগেট জিজ্ঞাসাবাদ দেন।
অন্যদিকে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ইনু এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ইনুদের মতো ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের ইন্ধনে শেখ হাসিনা এতবড় গণহত্যা চালিয়েছেন। তাই তার রিমান্ড প্রার্থনা করছি।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই গুলশান থানাধীন প্রগতি স্বরণীতে আন্দোলন চলাকালে মোঃ বাহাদুর হোসেন মনির রাস্তা পার হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন। পরে মনিরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷ এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিহতের পিতা মোঃ আবু জাফর রাজধানীর গুলশান থানায় শেখ হাসিনাসহ ১০৫ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে আরও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
সালমান, ইনু, শাজাহানসহ ৬ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রিক বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শাজাহান খান, জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা উত্তর সিটির করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম ও আইনজীবী মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী রবিনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় এসব আসামিদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর করে আসামিদের সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমান।
এসব মামলার মধ্যে সালমান এফ রহমানকে মিরপুর থানার হত্যা মামলায়, শাহবাগ থানার হত্যা মামলায় জুনাইদ আহমেদ পলককে, বিমানবন্দর থানার হত্যাচেষ্টা ও উত্তরা পশ্চিম থানার হত্যা মামলায় আতিকুল ইসলামকে, হাতিরঝিল থানার হত্যা মামলায় শাজাহান খানকে এবং গুলশান থানার হত্যা মামলায় হাসানুল হক ইনুকে এবং আইনজীবী মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী রবিনকে উত্তরা পশ্চিম থানার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
"খুব ভালো আছি" : শাজাহান খান
এদিন গ্রেফতার দেখানোর পর আদালত থেকে সিএমএম আদালতের হাজতখানার দিকে নেয়ার পথে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে উদ্দেশ্য করে এক আইনজীবী বলে ওঠেন, "বড় বড় কথা কইছেন। এখন কেমন লাগে? উত্তরে শাজাহান খান বলেন, "খুব ভালো, খুব ভালো, খুব ভালো লাগে।" এরপর হাসতে হাসতে চলে যান হাজতখানার দিকে। তবে এদিন সালমান এফ রহমানসহ অন্যান্য আসামিদের মাথা নীচু করে চলে যেতে দেখা গেছে।