বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্ববৃহৎ মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ এখন ৯৪ ভাগ শেষ হয়েছে। চলতি এ বছরের ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধনের কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
যমুনা নদী বিভক্ত টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ জেলায় সংযুক্ত এ সেতুটি দেশের উত্তর-পশ্চিামাঞ্চলের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার হাতে নেন এ মেঘা প্রকল্পটি। এই সেতু নির্মাণের ফলে রেল যোগোযোগের যেমন নতুন দিগন্তের সূচনা হবে, তেমনি গোটাদেশ জুড়ে সংযুক্ত হবে রেল যোগাযোগের নতুন নেটওয়ার্ক। আন্তদেশীয় যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে পারবে। এতে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। সড়কপথে বঙ্গবন্ধু সেতুর ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পরিবহন খরচ। যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা বৃজ্ঞদের। খুলবে অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনার দুয়ার।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সেতুর পিলার নির্মাণের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩’শ মিটার উজান দিয়ে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ডুয়েল গেজ ডবল-ট্র্যাকের এ সেতু। এতে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭’শ ৮১ কোটি টাকা। জাপান ও বাংলাদেশ সরকার যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়িত হচ্ছে। নির্মাণ কাজের নির্ধারিত সময় ২৪ আগস্ট ২০২৪ সাল হলেও এ বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
তিনটি প্যাকেজে আন্তর্জাতিক ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ডব্লিউডি-১ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে জাপানের ওবাইসি-আইএইচআই ও এসএমসিসি নামে তিনটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের কাজ করছে জাপানের আইএইচআইও এসএমসিসি কোম্পানি এবং ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের কাজ করছে জাপানের দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটিতে ৫০টি পিলারের উপর ৪৯টি স্প্যান বসানো হয়েছে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য গড়ে প্রায় ১’শ মিটার। স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমাংশের সংযোগ রেললাইন নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ। এছাড়া বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্লাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ৬টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। রেল সেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও দু’টি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতুতে কোনো স্লিপার থাকবে না। সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
নির্মাণাধীন রেল সেতুতে সহস্রাধিক দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটির ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আলফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, দ্রুত গতিতেই এগিয়ে চলেছে প্রকল্পের কাজ। ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল কিন্তু সেটি ডিসেম্বর নাগাত সময় লাগবে।