ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩০ ভাদ্র ১৪৩১
ই-পেপার শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে গ্রেপ্তার      দশ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি আন্ডারপাস প্রকল্প      ভৈরবে ট্রাক-সিএনজি-মোটর সাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১      কক্সবাজার উপকুলে ফিরেনি ১৩ ফিশিং ট্রলারসহ ৫ শতাধিক জেলে      কক্সবাজারে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল      




নজরদারি অব্যাহত
প্রস্তুত হচ্ছে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তালিকা
অতি উৎসাহী দলবাজদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে
এসএম শামসুজ্জোহা
Published : Wednesday, 4 September, 2024 at 12:27 PM
বিগত সরকারের আমলে অতিউৎসাহী দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-আমলাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুধু শীর্ষ আমলা নয়, মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করা ডিসি ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গোপনে তাদের ওপর নজরদারি শুরু করা হয়েছে। কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন সময়ের অতি দলবাজ আমলাদের। প্রতিটি ব্যাচের চিহ্নিত কর্মকর্তাদের ওই তালিকায় নাম থাকবে। সেখানে অতীতের কর্মকান্ড থেকে শুরু করে সরকারি দলবাজ পরিচয়ে যে ধরনের সুবিধা নিয়েছেন তার সবই উল্লেখ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনে তাদের অতি উৎসাহী খবরদারি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টতায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে। চলছে নানান পর্যালোচনা। প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের এখন কী হবে- এমন প্রশ্ন সর্বত্র জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। বিগত ১৬ বছরে যেসব যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাকে যারা প্রতিপক্ষ হিসাবে চিহ্নিত করে প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করেছেন, বছরের পর বছর ওএসডি রেখেছেন এবং নানাভাবে হয়রানি ও জুলুম করেছেন, তাদেরকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা। 

ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা বলছেন, এরকম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি শুধু প্রশাসন ক্যাডারে নয়, পুলিশ ক্যাডারসহ প্রতিটি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলে প্রশাসনের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে দলীয়করণের বিষবৃক্ষ বপন করা হয়েছিল। একশ্রেণির সুবিধভোগী ও নব্য আওয়ামী লীগধারী কর্মকর্তাদের অত্যাচারে প্রশাসনের হাজার হাজার কর্মকর্তা ১৬ বছরে সীমাহীন জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা বলেন, এ পর্যন্ত এসএসবির (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) বৈঠকে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন; তাদের কোনো ক্ষমা নেই। পদোন্নতিবঞ্চিত করার জন্য প্রথমত দায় তাদের। এছাড়া প্রতিটি ব্যাচে একশ্রেণির আওয়ামী দালাল ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তরা পদোন্নতিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যারা একেকজন শোষকের মতো ভূমিকায় ছিলেন। তাদের কারও ক্ষমা হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী নামধারী দালাল ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগ বিদেশে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন। সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনা করানোসহ রাজসিক আরাম-আয়েশে রেখেছেন। কেউ কেউ আগে সন্তানদের পুনর্বাসন করেছেন; এরপর প্রায় প্রত্যেকে সে দেশে বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনে গোপনে দ্বিতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন। প্রতিটি ব্যাচের এরকম দুর্বৃত্তদের সংখ্যা কম নয়। সূত্রমতে, প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কোনো সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন সময়ে তারা একত্রিত হয়ে গোপন বৈঠক করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ যেন দেশ থেকে পালাতে না পারেন। আর যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অতি-দলবাজদের কালো তালিকাভুক্তির কাজ দ্রুতই শেষ করা হবে। তাদের নাম, ব্যাচ ও পরিচিতি নম্বরের পাশে ব্ল্যাকলিস্টেড মার্ক করে রাখা হবে। তবে কোনো সৎ, নির্ভীক ও সজ্জন কর্মকর্তা যাতে অযথা হয়রানি না হন; সেটি বিশেষভাবে নজর রাখা হবে। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেসুর রহমান জানান, তালিকা প্রস্তুতির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। তাদের শুধু ওএসডি নয়, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার পক্ষপাতমূলক কাজ করবে না। এই দপ্তরে সরকার সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার পরপরই তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রশাসনকে দলবাজমুক্ত করতে কিছু পদক্ষেপও নিয়েছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনকে শতভাগ দলীয়করণ করে সাজানো হয়েছিল। তাই বর্তমান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। কয়েকভাবে এর প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরসমূহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানেন না। প্রশাসনে অনেকটাই সমন্বয়হীনতায় চলছে। অতীতে সার্ভিস রুলস উপেক্ষা করে প্রশাসনে পদোন্নতি, পদায়ন বাস্তবায়ন করত বড় বড় কর্মকর্তারা। গত ১৬ বছরে এর মাশুল দিতে হয়েছে সাধারণ কমকর্তাদের। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে অনেক মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে। যারা এসব কাজ করেছেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, গত সরকারের আমলে কয়েক ডজন প্রভাবশালী আমলার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। চাকরি জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে মালিক হয়েছেন শত শত কোটি টাকার। এসব অবৈধ অর্থে তারা দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। কারও কারও রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির বিপুল পরিমাণ শেয়ার। দেশের বিভিন্ন জায়গায় জমি আছে অনেকের। এসব সম্পদের বেশিরভাগই স্ত্রী, সন্তান কিংবা আত্মীয়স্বজনদের নামে। অনেকেই চাকরি শেষে নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে। কেউ কেউ গড়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কয়েকজন আবার দেশ ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। কারও কারও বিরুদ্ধে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে।

সচিবালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, এসব অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে ফাইলবন্দি ছিল। সরকারে ওপর মহলের চাপে তাদের বিষয়ে কোনো কাজ করা যায়নি। ক্ষমতার পালাবদলে সেসব ফাইল নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে নতুন সরকার। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব অভিযোগ নিয়ে কাজ করা হবে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান তালিকায় প্রথমদিকে রয়েছেন বিগত সরকারের আমলের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং বিভিন্ন জেলার ডিসি প্রশাসনিক সচিব ও আমলারা। এসব শীর্ষ আমলা-সচিব বিগত সরকারের আমলে অনেক প্রভাবশালী ছিল। তারা তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই দুর্নীতিপরায়ন সচিব-আমলাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হবে।

সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েকটি সূত্র জানায়, শুধু ক্যাডার কর্মকর্তা নন, নন-ক্যাডার ও সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে যারা বিগত সময়ে চরমমাত্রায় ও প্রকাশ্যে দলবাজি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে সচিবালয় সমবায় সমিতি ঘিরে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে যারা সমিতির টাকা লুটপাট করেছেন, তাদেরকে কোনোভাবে ছাড়া যাবে না। তারা যেন দেশ থেকে পালাতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। সচিবালয় সমবায় সমিতির অর্থ যারা তছরূপ করে নিজেরা ফুলেফেঁপে উঠেছেন, তাদের তদন্তের আওতায় নিয়ে বিচার করার জোরালো দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, তারা শুধু কর্মচারীদের হয়রানি করেই ক্ষান্ত হননি, বহু ক্যাডার কর্মকর্তাকে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি ট্যাগ লাগিয়ে হেনস্তা করেছেন।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]