ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রোববার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
ই-পেপার রোববার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতকে কড়া বার্তা দিলেন ড. ইউনূস       দ্রুত সময়ের মধ্যে গুম খুনের আসামি হাসিনার বিচার করতে হবে : মামুনুল হক      নওগাঁয় বজ্রপাতে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু       কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস      বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রীষ্মের রেকর্ড গড়লো ২০২৪      ঢাকায় এসেছেন কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান      পরিত্যক্ত অবস্থায় পুলিশের লুটকৃত অস্ত্র উদ্ধার      




কমছে দাম, কাটছে সংকট: ডলারে ইউটার্ন
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে টানা তিন মাস ধরে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়ছে
ভোরের ডাক রিপোর্ট:
Published : Saturday, 23 March, 2024 at 11:49 AM
দেশে চলমান ডলার সংকট কেটে যাচ্ছে। শক্তিশালী হতে যাচ্ছে টাকা। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের অনানুষ্ঠানিক দাম প্রায় চার থেকে ছয় টাকা কমেছে। ঈদ সামনে রেখে ডলারের সরবরাহ আরও বাড়ার প্রত্যাশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে আগামীতে ডলারের দাম আরও কমার আশা করা হচ্ছে। ডলারের সরবরাহ বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে এখন এলসি খুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ব্যাংকাররা বলেছেন, রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় টানা তিন মাস ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোকে যেভাবে ডলার সরবরাহ বেড়েছে; তা বাজারের চলমান ডলার সংকটের উন্নতির জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ ডলারের ধারণক্ষমতা যা বেড়েছে; তা মাত্র কয়েকটি ব্যাংকের কাছে। এখনো অনেক ব্যাংকের ডলারের সংকট রয়েছে। ফলে এসব ব্যাংক আমদানি বিল পরিশোধের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডলার সংকটে আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ডলারের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আমদানিকারকরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। এ উদ্যোগের আওতায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমিয়ে পুননির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে পাওয়া যাবে ১১০ টাকা। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করা হবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান রমজান মাস ও আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে পরিবার-পরিজনদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। তাতে বাজারে ডলারের সরবরাহ আরও বেড়ে যাবে। এর ফলে ঈদ ঘিরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে চাপ কিছুটা সহনীয় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২০ দিনে বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪৭ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। এতে সব পর্যায়ে ডলারের দাম কমতে শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ডলার সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া নানা পদক্ষেপের একটা প্রভাব এখন বাজারে পড়ছে। ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করেছে।

জানা যায়, সরবরাহ বাড়ায় আমদানিতে ডলারের অনানুষ্ঠানিক দাম কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। এখন আমদানি বিল নিষ্পত্তিতে ডলারের দাম নেওয়া হচ্ছে ১১৯ থেকে ১২০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ১২২ থেকে ১২৪ টাকা। তবে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এর থেকেও ১০-১২ টাকা কম নির্ধারণ করা আছে। সর্বশেষ বাফেদা ও এবিবি মিলে আমদানিতে ডলারের দাম নির্ধারণ করে ১১০ টাকা। জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ব্যাংকগুলোর আমদানির পেমেন্টের বড় একটা চাপ ছিল। এখন সে চাপটা কমে গেছে। এছাড়া রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ছে। তাই বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোয় ডলার সরবরাহ পরিস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে রেকর্ড ২১৬ কোটি ডলার প্রবাসী আয় আসে। এর আগের মাসেও প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলারের বেশি ছিল। এছাড়া রফতানি আয়েও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে পণ্য রফতানিতে আয় এসেছে প্রায় ৫১৯ কোটি ডলার। এটি গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। এছাড়া গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে মানুষের ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার পর এর সুফল মিলছে। খোলা বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডলারে দাম কমেছে প্রায় ৫ টাকা। 

গত দুদিন রাজধানীর দিলকুশা ও মতিঝিলের বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে গিয়ে দেখা যায়, এই বাজারে প্রতি ডলারে ক্রেতাদের থেকে নেওয়া হচ্ছে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। গত সপ্তাহেও যা ছিল ১২১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা। আর তার আগের সপ্তাহে ছিল ১২৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৪ টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বলেন, চাহিদা-জোগানের ওপর নির্ভর করে জিনিসপত্রের দাম কমে বাড়ে। একইভাবে চাহিদ জোগানের গ্যাপ কমে আসার কারণে ইনফরমাল মার্কেটেও ডলারের রেট কমে এসেছে। তিনি আশা করেন, সামনের দিনগুলোতে ডলারের দাম আরও কমবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি, আইডিবিসহ কিছু দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে সরকার ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার আশা করছে। আবার প্রবাসীরা জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৪৮.২০ শতাংশ। জানুয়ারিতে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার। যা ছিল গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে মোট ১ হাজার ৪৭৪ কোটি ৯০ লাখ (১৪.৭৫ বিলিয়ন) ডলারের। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ ডিসেম্বর মাসওয়ারি রপ্তানি আয়ের হিসাবে গত চার মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা জানান, সরকার চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পরিকল্পভাবে গুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়ে এগোচ্ছে। সেই পদক্ষেপেরই একটা সুফল হলো চলতি হিসাবের ভারসাম্যকে উদ্বৃত্তের ধারায় ফিরে আনা। সার্বিক পরিস্থিতি বলছে। এটা আর ঋণাত্মক বা নেতিবাচক হবে না। যাতে না হয় সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তা নিবিড়ভাবে মনিটরিংও করছে।

এ বিষয়ে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এসএম জামান বলেন, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হলে স্বাভাবিক নিয়মে যে কোনো জিনিসের দাম কমে যায়। বেশ কিছুদিন ধরে খোলাবাজারেও ডলারের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি বলে মনে হচ্ছে। কোনো মানি চেঞ্জারেই নির্ধারিত রেটে ডলার মিলছে নাÑ এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, এটা হওয়ার কথা নয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অ্যাসোসিয়েশনকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়: সেই নির্দেশনা এই ২৩৪টি মানি চেঞ্জার মানতে বাধ্য। কাজেই আমাদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে নির্ধারিত রেটের বাইরে ডলার কেনাবেচার অভিযোগ উঠলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।







সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]