কৃষিসচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালকসহ চুক্তিভিত্তিক সকল নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কৃষিখাতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে তারা বলেন, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাসসহ কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তর এবং প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অনতিবিলম্বে বাতি করতে হবে। একইসঙ্গে ডিএই’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহণ ও অপসারণ; বঞ্চিত কর্মকর্তাদের যোগ্য পদে পদায়ন করতে হবে।
বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ির ডিএই’র হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবির কথা জানান। এ সময় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিএই’র অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন, অতিরিক্ত উপপরিচালক রেজাউল করিম, উপ পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ, ষিবিদ ড. মো. আরিফ মাহমুদ মিতু প্রমুখ।
নাসির উদ্দিন বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা করেছিল তারা সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে যোগ্যতারভিত্তিতে কর্মকর্তা নিয়োগ ও পদায়ন করবেন। কিন্তু এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে এর কোন কার্যকারিতা শুরু হয়নি। এই মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, তার স্বামী বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ বখতিয়ার, ডিএইর ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাসসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)সহ কোন পদেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণ করা হয়নি। বিগত ১৫-১৬ বছরে কৃষিখাতের যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে তা শেষ করা হচ্ছে না। অনতিবিলম্বে এদের অপসারণ ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তিনি বলেন, গত ৪ আগস্ট সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিবিদ বাহাউদ্দীন নাসিমসহ কৃষিসচিব ও ডিএইর মহাপরিচালকের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিছিল ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। যা সরকারি চাকরিবিধির পরিপন্থি। তারা ভয় ও লোভ দেখিয়ে কর্মকর্তাদের বাধ্য করেছিল। তবে কেউ কেউ স্বেচ্ছায়ও গিয়েছিল।
আরিফ মাহমুদ মিতু বলেন, সিনিয়রদের ডিঙিয়ে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। এমনকি ৬০ জন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে ডিজিও নিয়োগ করা হয়েছিল। এসব বন্ধ করতে হবে। সিনিয়রিটি ও যোগ্য ব্যক্তিদের ডিজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে পদায়ন করতে হবে।
ড. শাহিনুল ইসলাম বলেন, মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি সেক্টরের কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেককেই ঢাকার পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। ইচ্ছা হলেই সব তথ্য দেয়া যেতো না। একটি ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা হতো। তিনি বলেন, আমরা বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতির শ্বাতপত্র প্রকাশ করবো। তা ছাড়া কৃষিযান্ত্রিকীকরণ, প্যাকেজিং ল্যাবের দুর্নীতি নিয়ে দুদক কাজ করছে।
লিখিত বক্তব্যে আরিফ মাহমুদ মিতু বলেন, ইতোপূর্বে ২০১ জন কৃষিবিদের স্বাক্ষরে বর্তমান সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূওসর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন প্রশিক্ষণ উইং এর পরিচালক খাইরুল আলম প্রিন্স। বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারা দেশে কৃষির বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়। এদের চক্রান্তে সারা দেশে কৃত্রিম সার সংকট তৈরির অপচেষ্টা চলছে। এমতাবস্থায় খামারবাড়িসহ কৃষি সেক্টরের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদের আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবর্তন করা অতীব জরুরী।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বৃৃহস্পতিবার ডিএই’র ডিজির অফিসের সামনে অবস্থান ও শুক্রবার আন্দোলনে নিহত হওয়া শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল করার কর্মসূচী ঘোষণা করেন।