অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল বুধবার বিকেলে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবার সম্মতিক্রমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেনাপ্রধান বলেন, ‘ড. ইউনূস আজ বৃহস্পতিবার দেশে আসবেন। আমি তাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করব। আশা করি, রাত ৮টায় অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। এ সরকারে ১৫ জন সদস্য থাকতে পারেন বলেও জানান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, সময় কম হলেও বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য চেষ্টা চলছে। সেনাপ্রধান বলেছেন, ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি আমাদের সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাবেন।
শিগগির লুটতরাজ বন্ধ হয়ে দেশের পরিস্থিতি অবাধ সহজ পরিস্থিতিতে ফেরত চলে আসবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে। সবাই মিলে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ সক্ষম হবে ঘুরে দাঁড়াতে। তিন বাহিনী জনগণের সাথে আছে। সুন্দর ভবিষ্যতে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি। সেনাপ্রধান গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গুজব চলছে, গুজবে কান দেবেন না। গুজব রটাবেন না। নিবৃত্ত থাকলে ভালো হবে। পুলিশের মনোবলও ফেরত আসবে তুলে ধরে তিনি বলেন, পেশাদার ফোর্স হিসেবে তারা দ্রুত কাজ করতে সক্ষমত হবে। এ সময় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের কাজের প্রশংসা করেন সেনাপ্রধান। একই সঙ্গে পুলিশ সক্রিয় হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাল ধরতে দেশে ফিরছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুবাই থেকে ফ্লাই এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে আজ দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছেন ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোরশেদ। গতকাল বুধবার ইউনূস সেন্টারের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অলিম্পিক কমিটির আমন্ত্রণে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্যারিসে গিয়েছিলেন ড. ইউনূস। সেখানে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন, তার একটি ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেই কারণে তার ফিরতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশবাসীর উদ্দেশে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস এক বার্তা দিয়েছেন। এতে তিনি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অনুগ্রহ করে নিজে শান্ত থাকুন এবং আপনার আশপাশের সবাইকে শান্ত থাকতে সহায়তা করুন।
শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপরই মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইউনূস সেন্টারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যাঁরা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যাঁরা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। আসুন, আমরা আমাদের এ নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করি। আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে, সব ধরনের সহিংসতা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি এবং ছাত্র ও দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। ড. ইউনূস বলেন, আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ দেশটিকে আমাদের নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণেরা প্রস্তুত। অকারণ সহিংসতা করে এই সুযোগ আমরা হারাতে পারি না। সহিংসতা আমাদের সবারই শত্রু। অনুগ্রহ করে শত্রু সৃষ্টি করবেন না। সবাই শান্ত থাকুন এবং দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসুন। এদিকে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনিডিটিভকে দেওয়া এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে মঙ্গলবার শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে চারদিকে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবেশী মিয়ানমার, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিমবঙ্গ সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়বে অস্থিরতা। ড. ইউনূস বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা এবং যদি তা অর্জন করা না যায়, তাহলে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়বে। এনডিটিভির এক প্রশ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটা খুব একটা সুখকর পরিস্থিতি হবে না। তিনি বলেন, আপনি যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করেন, তা মিয়ানমারসহ বাংলাদেশের চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে এবং পশ্চিমবঙ্গের সেভেন সিস্টার্সে ছড়িয়ে পড়বে। এটি আমাদের চারপাশে এবং মিয়ানমারের সর্বত্র আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো হবে। বড় সমস্যা হবে, কারণ এখানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ১৭ কোটি মানুষ আছে, যাদের অধিকাংশই তরুণ; যারা কখনো ভোট দেয়নি। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, দেশে গণতন্ত্র আছে। এই তরুণরা কখনোই ভোট কেন্দ্রে যায়নি, কারণ নির্বাচন হয়নি। আমাদের তরুণদের সাথে কথা বলতে হবে।
নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের ৬ মাসের সাজা বাতিল : শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের অন্য তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সাজা বাতিল করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বুধবার বিকেলে শুনানি শেষে বিচারক এম এ আউয়াল এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, এরপর আর ড. ইউনূসের আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হতে আর কোনো বাধা নেই।