দীর্ঘ প্রায় ষোল বছর পর নির্ভয়ে প্রাণ খুলে সমাবেশ করল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। গতকাল বুধবার পূর্ব ঘোষিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশে জনতার ঢল নামায় তা এক পর্যায়ে মহাসমাবেশে রুপ নেয়। কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ শুরুর পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মূলত এ সমাবেশে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ভিডিও বার্তায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য কথা বলেছেন।
এছাড়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাহির থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। ফলে দীর্ঘ বছর পর সমাবেশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বক্তব্য শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপির উপর ব্যাপক দমন পিড়ন শুরু হয়। যা গত প্রায় ১৬ বছর ধরে অব্যাহত ছিল। এ সময়কালে অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে ঘুম ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নানাভাবে নির্যাতনে পঙ্গুত বরণ ও দেশের কারাগারগুলোতে বছরের পর বছর ছিলেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। অনেকে নিজের বাসায় অবস্থান করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াতে হয়। এমতাবস্থায় গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের ভয়াবহ পতনের পর সব ধরনের মামলা থেকে জামিন পাওয়ায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। আর গতকাল বুধবার সমাবেশের মাধ্যেমে দীর্ঘ দিনের ভয় আতঙ্ক ও যন্ত্রণা কাটিয়ে অনেকটাই চাঙ্গা হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নয়াপল্টনে বিএনপির ডাকা গতকালের সমাবেশে বিপুল লোক সমাগম হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা এবং রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশে এসেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছেন এই সমাবেশে। ফলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে থেকে শুরু করে নয়াপল্টন ফকিরেরপুল হয়ে আরামবাগ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ঢল নামে। লোকে লোকারণ্য এই সমাবেশে নানা ধরনের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো নয়াপল্টন এলাকা। বিশেষ করে দীর্ঘ ৭ বছর পর জনসম্মুখে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনতে পেরে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েনে নেতাকর্মীরা।
সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা নির্ভয়ে কোন সভা সমাবেশ করতে পারেনি। শুধু তাই নয় নিজ বাড়িতেও ঠিকমত বসবাস করা সম্ভব হয়নি। নানা হামলা মামলার ভয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় বছরের পর বছর লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে তারা অনেকটা প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। ভাটারা থানা ৩৯ ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের দমন-পিড়নের কারণে ঠিকমত নিজ বাসায় থাকতে পারিনি। এমনিক এতোদিন আমরা নির্ভয়ে কোন সভাসমাবেশ পর্যন্ত করতে পারিনি। তার পতনের মাধ্যেমে আমরা এখন নিশ্চিন্তে সুন্দর একটা সমাবেশ শেষ করলাম।
সমাবেশে আসতে পেরে আমারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ছি। বিশেষ করে সমাবেশে দলের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য শুনে মন ভরে গেছে। এতোদিনের সব কষ্ট ও যন্ত্রণা অনেকটা দূর হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের অন্যান্য নেতারাও বক্তব্য রাখেন।