ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রোববার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩১ ভাদ্র ১৪৩১
ই-পেপার রোববার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র      ঢাকা কলেজের শঙ্খনীল বাস ভাঙল আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা      সৈকতে ভেসে এলো আরও এক জেলের দেহ      সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে সাফি ৪ দিনের রিমান্ডে      




পাল্টে গেছে সচিবালয়ের দৃশ্যপট; বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহড়া-হুংকার
আকতার হোসেন
Published : Wednesday, 7 August, 2024 at 12:07 PM
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরের দিন পাল্টে গেছে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের দৃশ্যপট। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর ঘিরে নেই সেই পুরনো কোন জৌলশ। খাঁ খাঁ করছে তাদের দপ্তর। অথচ গত সপ্তাহেও মন্ত্রীদের রুমগুলো ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। শোনশান নিরবতা সেই  রুমগুলোর সামনে থেকেও সরলো নামফলক। অপরদিকে সরকারের পতনের পর সচিবালয়ে সংগঠিত হচ্ছেন দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সচিবালয়ে জরুরি এক বৈঠক করে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে সদস্য পতন হওয়া আওয়ামী সরকারপন্থিদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এত বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত এসব কর্মকর্তারা। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরিতে এক আলোচনা সভায় এসব হুঁশিয়ারি দেন তারা। 
গতকাল সকালে সচিবালয় খুলে দিলে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে থাকেন। তাদের বিভিন্ন স্থানে জটলা করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে দেখা যায়। সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরি কক্ষে তারা সভা করেছেন তারা। কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা দীর্ঘদিন বঞ্চিত হয়েছি, বৈষম্যের শিকার হয়েছি। এখন বৈষম্যবিরোধী একটি আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার পেতে চাই। 
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের জানান দিতে শুরু করেছেন। সকাল ১০টার দিকে ৬ নম্বর ভবনের সামনে বিএনপিপন্থি ২০-২৫ জন কর্মচারীকে দেখা গেছে। তাদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। গত কয়েকদিনে জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে দীর্ঘ ব্যানার লাগানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো সব খুলে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরিতে সভা করার সময় কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর ছবি খুলে ফেলার চেষ্টা করেন। এতে কয়েকজন বাধা দিলে অন্যরা তা করতে পারেননি। 
সভায় পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, আপনারা অনেকেই দালালি করেছেন। সরকারি এমপি মন্ত্রীদের পিছু পিছু ঘুরেছেন। আজকের এই আলোচনায় এমন সুবিধাভোগী কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী থাকলে বের হয়ে যান। যদি এমন কেউ থাকেন তাহলে আপনার বিবেককে প্রশ্ন করেন এই ১৫ বছরে আপনারা কি করেছেন। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে এমন কর্মকর্তারা বের হয়ে যান। তা না হলে আপনাদের কিছু হয়ে গেলে সে দায় আমরা নেব না। তারা আরও বলেন, আমরা এতদিন পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলাম। অনেক মেধাবী কর্মকর্তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে চাপিয়ে রাখা হয়েছে। অবিচার করা হয়েছে। তারা বলেন, সচিবালয়ে কোনো কর্মকর্তার আদেশ মানা হবে না। আদেশ করতে হলে আমাদের অবগত করে করতে হবে। 
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা বলেন, এ আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে, যেসব ছাত্র ভাইয়েরা আত্মত্যাগ করেছে তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তারা জীবন দিয়ে আমাদের মুক্তি দিয়ে গেছে। আমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চাই না। যারা প্রাণ দিয়ে এই দেশেরে স্বাধীনতা এনেছে তারাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আগামীতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সরিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লেখা হবে। তারা আরও বলেন, আমরা এতদিন পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলাম। অনেক মেধাবী কর্মকর্তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে চাপিয়ে রাখা হয়েছে। অবিচার করা হয়েছে। 
১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা নেয়ামত উল্লাহ ভুইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমি পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছি, নিগৃহীত হয়েছি। আমার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার মতো অনেকে আছেন তারা গত ১৫ বছর ধরে ওএসডি। আমাদের কোনো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। আমরা এখন সব বঞ্চনার নিরসন চাই। যেহেতু শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনটা হচ্ছে বৈষম্য দূর করার আন্দোলন। তিনি বলেন, আমরা এখন শৃঙ্খলার সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামতের কাজ করতে চাই। আজকে আমরা আমাদের মধ্যে মতবিনিময় করেছি। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, ১৬ বছর ধরে আমাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। কোনো পদায়ন করা হয়নি। আমরা আমাদের ন্যায্যতা পেতে চাই। 
আরেক কর্মকর্তা আবু রায়হান বলেন, আমার বাড়ি বগুড়ায় হওয়ায় আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পোস্টিং দিয়েছে। আমার বাড়ি বগুড়া এটাই আমার অপরাধ। ওএসডি করে রাখা হয়েছে, পদোন্নতি পর্যন্ত আমাকে দেওয়া হয়নি। 
ফাঁকা পড়ে আছে মন্ত্রীদের রুম, সরানো হয়েছে নেমপ্লেট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর পাল্টে গেছে সচিবালয়ের চিত্র। সব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নামফলক নামানো হয়েছে। খাঁ খাঁ করছে তাদের দপ্তর। অথচ গত সপ্তাহেও মন্ত্রীদের রুমগুলো ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। মন্ত্রীরা অফিস করলে অধিকাংশ সময় তাদের রুমগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারী, নেতা-কর্মীদের ভিড় থাকতো। গতকাল রুমগুলো ফাঁকা পড়ে ছিল। 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির দিনে সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করার পর অন্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা ত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে। গতকাল থেকে অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, সব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নামফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মন্ত্রীর দপ্তরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু মন্ত্রীর নামটি সরানো হয়নি, পুরো নামফলকটিই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যে দপ্তর সব সময় সরগরম থাকতো সেখানে এখন সুনসান নীরবতা। আইন মন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, নাম ফলকটি থাকলেও সেখান থেকে সরে গেছে আনিসুল হকের নাম। জনপ্রশাসন মন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের নাম ফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তাদের ইউনিফর্ম রেখে সাদা পোশাকে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা গেছে। তবে সচিবরাও অফিস করেছেন খুবই কম। দু-একজন সচিব আসলেও তারা অল্প সময়ের মধ্যে আবার সচিবালয় থেকে বেরিয়ে যান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তবে দুপুর পৌঁনে ১২টার দিকে হঠাৎ করেই আতঙ্কে সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বের হয়ে যান। সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। এরপরই সবাই হুড়াহুড়ি করে বের হতে শুরু করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ে হামলা হবে, এমন খবরে সবাই বের হয়ে যাচ্ছেন। এটা গুজব নাকি সত্য তা এখন পর্যন্ত জানি না। সকাল থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে সচিবালয়ে। পোশাকধারী কোনো পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখা যায়নি। 
সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত করে খুলে দেওয়া হয়। সকালে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের গেটে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তবে নিরাপত্তার জন্য সচিবালয়ের এক নম্বর গেট ছাড়া বাকি সবগুলো গেট বন্ধ রাখা হয়। দেখা গেছে, এক নম্বর গেটে দাঁড়িয়ে সেনাসদস্যরা পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গাড়িগুলোকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেন। এক ও দুই নম্বর গেটের মধ্যবর্তী দর্শনার্থী অভ্যর্থনা কক্ষেও সেনা সদস্যরা ছিলেন। সচিবালয়ের কোথাও ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। তবে সেনাবাহিনীকে পুলিশ সদস্যদের সাদা পোশাকে সহায়তা করতে দেখা গেছে। সচিবালয়ের বিভিন্ন স্থানে কর্মচারীদের জটলা করে আলোচনা করতে দেখা গেছে। আলোচনার বিষয়বস্তু সরকারের পতন। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার আন্দোলনকারীরা সচিবালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। তবে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তারা ব্যর্থ হন।
গত বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। এরপর ১১ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। ওই মন্ত্রিসভায় সদস্য ছিল প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ জন। পরে ১ মার্চ আরও সাতজন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা হয় প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৪ জন। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৫ জন মন্ত্রী ও ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পাঁচ বছরের জন্য মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তবে এ মন্ত্রিসভা প্রায় সাত মাসের মাথায় বিলুপ্ত হলো। 







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]