কোটা সংস্কার দাবি সরকার মেনে নেয়ার পরও নয় দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীদের সাথে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন কিছু অভিভাবক ও শিক্ষক।
এছাড়া, আলাদাভাবে নাগরিক ও শিল্পী সমাজ, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের সাথে এ সময় নিজেদের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার বেশিরভাগ স্থানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন কারা হলেও উত্তরাসহ কিছু স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা গণমিছিল কর্মসূচিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সব মিলিয়ে বন্ধের দিনেও স্বস্তিতে ছিলেন না রাজধানীর বাসিন্দারা। আবার কোন দিকে যাচ্ছে ঢাকার পরিস্থিতি সেই চিন্তায় ঘুম হারাম অনেকের।
দমন-পীড়ন, নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে। বাংলামোটরে পরিকল্পনাবিদরা মানববন্ধন করেছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকেরা বিক্ষোভ করেছেন। হাইকোর্ট মোড়, শাহবাগ ও ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাবের সড়ক দখল করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টিতে ভিজেই আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন।
এছাড়া, গতকাল সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত শিল্পী ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে সাধারণ মানুষ ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদে শামিল হন। এসব কর্মসূচি পালন কালে তারা নিহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচার এবং হত্যার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি করেন।
রাজধানীর উত্তরায় জমজম টাওয়ারের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় উত্তরার জমজম টাওয়ারের মোড় ও ১১নং সেক্টর মাইলস্টোনের সামনে গণমিছিলের সময় এ সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সোয়া চারটার পর আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা মাইলস্টোন কলেজের দিকে থাকা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া শুরু করেন। এ সময় পুলিশও শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় এবং সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশকে ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। এ ঘটনায় উত্তরা ১১নং সেক্টরের ১নং রোডে অবস্থিত ভুবন লন্ড্রি হাউজের মালিক দুলাল হাওলাদার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, আন্দোলনের নামে যাতে ঢাকায় ফের কেউ সহিংসতা চালাতে না পারে সেজন্য নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, রামপুরা, মগবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে, ফের গণমিছিলের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তারা রোববারের মধ্যে কারফিউ প্রত্যাহার, গ্রেপ্তারদের মুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু ও বর্তমান সরকারকে শিক্ষার্থী-জনতা হত্যার দায়ে পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। দাবি মানা না হলে ওইদিন বিকেলে গণমিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হবে। শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্রোহযাত্রায় ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। গণগ্রেপ্তার বন্ধ, জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারসহ কয়েকটি দাবিতে ডাকা দ্রোহযাত্রা কর্মসূচি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গতকাল দুপুরে প্রেসক্লাবে থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান করেছেন তারা। এতে অংশ নিয়েছেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক, শ্রমিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। সবার মিছিল স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা। ফলে সব মিলিয়ে নতুন করে ঢাকার পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় বুঝে উঠতে পারছে না নগরবাসী। তবে নগরবাসীর মতে সবকিছু দ্রæত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক। যাতে তারা নিচিন্তে ঢাকায় বসবাস করতে পারেন।