বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে, তার একটি বড় অংশ সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহারের আওতায় আসছে না। এর ফলে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
প্রথমেই, পরিবেশগত প্রভাবের সরেজমিনেআসি। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে ৮৬% পুনর্ব্যবহারযোগ্য। তবে, এর একটি বড় অংশ সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয় না।প্লাস্টিক বর্জ্য সরাসরি পরিবেশে ফেলা হয়, যা মাটি ও পানি দূষণের প্রধান কারণ। (উৎস: প্রকৃতি সংরক্ষণে আইইউসিএন রিপোর্ট, ২০২০)
প্লাস্টিক পচনশীল নয়, ফলে এটি শতাব্দীর পর শতাব্দী মাটিতে বা পানিতে থেকে যায়। প্লাস্টিক দূষণ নদী ও সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। সা¤প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি ও মাছের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা জলজ প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বাংলাদেশে প্রায় ৩৬% প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহৃত হয়, যা উন্নত দেশের তুলনায় বেশ কম। উৎস: (ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ২০১৮)
বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের বড় উৎস হলো নদী। প্রতি বছর প্রায় ২০০,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদী ও সাগরে জমা হয়।উৎস: ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ, ২০১৯)
দ্বিতীয়ত, জনস্বাস্থ্য প্রভাব। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ বায়ু, পানি ও মাটির মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্লাস্টিক দূষণ শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও অন্যান্য মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, প্লাস্টিক বর্জ্য জমে থাকার কারণে মশা-মাছির বংশবৃদ্ধি হয়, যা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক প্রভাব। প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার না করার ফলে বাংলাদেশকে প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।(দ্য ডেইলি স্টার রিপোর্ট) ২০২১পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করলে কাঁচামালের খরচ কমে যায়, যা দেশের অর্থনীতির জন্য উপকারী। কিন্তু পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ার অভাবে আমাদের দেশকে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক আমদানি করতে হচ্ছে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এই সমস্যার সমাধানে আমাদের কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, সরকারকে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়া উন্নয়নের জন্য যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্য কমাতে এবং সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তৃতীয়ত, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে যাতে আধুনিক পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ানো যায়।
পরিশেষে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্লাস্টিক দূষণ রোধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেমন প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধকরণ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহারের প্রচার ইত্যাদি। উৎস: [বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর] প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার না করলে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির উপর যে বিপর্যয় নেমে আসবে, তা রোধ করতে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
লেখক: জেসমিন মলি, পরিবেশ ও উন্নয়ন কর্মী