বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষতি কটিয়ে দেশের অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল তখনই কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মাধ্যমে ফের অর্থনীতির ওপর আবার আঘাত হলো। অবশ্য কোটা আন্দোলনকারীদের দ্বারা নাশকতা হয়েছে এ কথা কেউ বলছেন না, এমন কি সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও বলছেন কোটা আন্দোলনের মধ্যে তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। যেভাবেই হোক দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক গুরুত্ব অনেক। কারা নাশকতা করেছে, কারা এসবের জন্য দায়ী সেই আলোচনা করা এই সম্পাদকীয় নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। সেটা রাজনৈতিক বিষয় তা রাজনৈতিকভাবেই নির্ণয় হবে। আমাদের কথা হচ্ছে ক্ষতি হয়েছে এবং তা বড় ধরনের ক্ষতি, কারো কারো মতে দেশের মোট আর্থিক ক্ষতি হবে তিন থেকে চার বিলিয়ন ডলার। যখন সরকার বৈদেশিক এবং দেশীয় মুদ্রার সংকটে আছে তখন অর্থনীতিতে নতুন করে ক্ষত সৃষ্টি ঠিক হলো না। যাই হোক যা হয়েছে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে এখন আবার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। অর্থনীতির পুনরুদ্ধারই এখন মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত।
দৈনিক ভোরের ডাকে প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কয়েক দিনের নাশকতায় দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থাপনায় নাশকতায় ওই স্থাপনার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে নানাভাবে। যেমন মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন নাশকতায় ক্ষতি ৫শ কোটি টাকার। ৫শ কোটি হয়তো স্টেশন দুটির মেরামত বাবদ খরচ হবে। কিন্তু এই রেল বন্ধ হয়ে গেল, তাতে মেট্রোর আয়ও বন্ধ হয়ে গেল। মেট্রোতে মাসে আড়াই কোটি টাকা আয় হচ্ছিল। সম্প্রতি যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে মাসে ৭২০ কোটি টাকা আয় হবে বলে মেট্রোরেলের এমডি সাংবাদিকদের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। হয়তো কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন বাদ দিয়ে চালু হবে। স্টেশন দুটি চালু হতে প্রায় এক বছর লাগবে বলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন। এই এক বছর দুটি স্টেশনের আয় থেকে বঞ্চিত হবে মেট্রোরেল। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। একই কথা এক্সপ্রেসওয়ে সম্পর্কে ঘটে। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকাতে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল প্রায় ১০ দিন। তাতে আর্থিক ক্ষতি তো আছেই, বৈশ্বিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা থেকে যেটুকু পিছিয়ে পড়ল তার আর্থিক ক্ষতিও তো অনেক বড়।
দেশ থাকলে আন্দোলন সংগ্রামের ইস্যু থাকবে। কিন্তু ঔপনিবেশিক বা দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে যেভাবে আন্দোলন সংগ্রাম হবে স্বাধীন দেশে তো সেভাবে হবে না। স্বাধীন দেশে কভিাবে হবে তা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিশুরা এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনে একটা পর্যায় পর্যন্ত ছাত্ররা দেখিয়েছে। যা হওয়ার হয়েছে এখন পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হতে হবে এবং অর্থনৈতিক পুনরাদ্ধারে সচেষ্ট হতে হবে।